তথ্যপ্রযুক্তির উদ্ভাবনে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখায় দেশের স্বনামধন্য আইসিটি প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটির তৈরী সফটওয়্যার এবং প্রযুক্তিগত সার্বিক সহায়তা ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে পরিচালিত বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) “সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন মনিটরিং প্ল্যাটফর্ম (সিবিভিএমপি)” ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) “ইলেকট্রনিক ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (ইটিআইএন)” দুটি প্রকল্পকে পুরস্কৃত করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফর্মেশন সার্ভিসেস বা বেসিস।
“গভর্নমেন্ট এন্ড সিটিজেন সার্ভিস” ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয় সিবিভিএমপি প্রকল্পটি এবং “ডিজিটাল গভর্নমেন্ট” ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয় ইটিআইএন প্রকল্পটি।
নানা ক্যাটাগরির প্রকল্প আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিস্তৃত সম্ভাবনা তুলে ধরছে। মনোনীত প্রকল্পগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিযোগিতার জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়, যা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সক্ষমতাকেও তুলে ধরছে প্রকল্প দুটি।
মূলত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম নিবন্ধন ও ই-গভর্নেন্স সেবা দেয়ার মাধ্যমে দেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় সিনেসিস আইটি লিমিটেডকে এ দুইটি পুরস্কার দেয়া হয়।
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব আহমেদ চৌধুরী বেসিস ন্যাশনাল আইসিটি অ্যাওয়ার্ড ২০২০ এর প্রধান বিচারক আব্দুল্লাহ এইচ কাফির কাছ থেকে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন।
সিবিভিএমপি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সব সিমকার্ড নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবির সত্যতা সঠিকভাবে যাচাই করাসহ ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্টেও আনা হয়েছে ডিজিটালাইজেশন।
সিবিভিএমপি’র আওতায় এ পর্যন্ত দেশের সব মোবাইল অপারেটরের মোট ২৫ কোটি ৩০ লাখের বেশি সিম কার্ড নিবন্ধন করা হয়েছে। এর মধ্যে মোট ইউনিক সাবস্ক্রাইব ১৩ কোটির বেশি। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে ১.২ লাখেরও বেশি মানুষ বিভিন্ন মাধ্যমে সিবিভিএমপি’র নিবন্ধন নিয়ে থাকে। সিবিভিএমপি সব মোবাইল ফোন অপারেটরের সিম ডেটার সর্বাধিক লেনদেনের ডেটাবেস তৈরি করতেও সক্ষম হয়েছে। প্রতি সেকেন্ডে যা ৫০০ ডেটা রেজিস্ট্রেশন করতে পারে।
সিনেসিস আইটিকে অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশ বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, “স্বয়ংক্রিয়, নির্ভুল, ও সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় বায়োমেট্রিক সিম রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে গ্রাহক সেবার যে উদাহরণ বিটিআরসি সৃষ্টি করেছে সেটি এখন সারা বিশ্বের কাছে একটি মডেল হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। বিটিআরসির সিবিভিএমপি প্রকল্পটি ইতিমধ্যে “ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি-উইসিস/WSIS উইনার পুরস্কার-২০২১” এবং আইটিইউ টেলিকম অ্যাওয়ার্ড ২০১৯ পুরষ্কার জয় করেছে যেটি প্রত্যক্ষভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশের এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের সক্ষমতার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হবে।
এ জয় বাংলাদেশের তরুণ প্রকৌশলীদের এবং এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটি যাতে নিঃসন্দেহে আমাদের জাতীয় সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আমি আমাদের তরুণ প্রকৌশলী ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটিকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
আমরা বিশ্বাস করি, ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরীর প্রাথমিক শর্ত হচ্ছে, দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা তৈরী ও দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতাই পারে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে।
বিটিআরসির সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি বলেন, “সিবিভিএমপি এখন বিশ্বের কাছে রোল মডেল, যা ইতিমধ্যে WSIS এবং আইটিইউ টেলিকম অ্যাওয়ার্ডে সেরা প্রকল্পের গৌরব অর্জন করেছে। সিবিভিএমপি প্রকল্পটি এ বছর বেসিসের সেরা প্রকল্প নির্বাচিত হওয়ায় আমি বিটিআরসি’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সকল মোবাইল ফোন অপারেটর এবং বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান সিনেসিস আইটিকে আন্তরিক অভিবাদন জানাই।”
তিনি আরও বলেন, “সিবিভিএমপি প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন যেমন প্রত্যেক নাগরিককে যথাযথভবে সিম প্রদান করতে পারছে, তেমনি জাতীয় নিরাপত্তা এবং অপরাধমূলক কার্যক্রমকে কমিয়ে আনতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পেরেছে। এখানে উল্লেখ করতে চাই, সিবিভিএমপির মত আন্তর্জাতিক মানের সফটওয়্যার তৈরী করেছে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান যেটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।”
এদিকে ট্যাক্স-বান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে ২০১৩ সালে প্রথম অনলাইন-ভিত্তিক ই-টিআইএন নিবন্ধকরণ সিস্টেম চালু করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে সিনেসিস আইটি লিমিটেড।
ই-টিআইএন হল দেশের একমাত্র অনলাইন সনদপত্র যা সব সরকারি কাজে গ্রহণযোগ্য। ই-টিআইএন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অন্যতম সফল আর্থিক প্রযুক্তি ভিত্তিক উদ্যোগ। এটি দেশের প্রথম সরকার-অনুমোদিত অনলাইন স্বয়ংক্রিয় ডিজিটাল সনদপত্র প্ল্যাটফর্ম এবং এ প্ল্যাটফর্মে একীভূত হওয়ার জন্য প্রথম জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইকরণ সিস্টেম।
ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ লাখ করদাতারা অনলাইনে ই-টিআইএন নিবন্ধকরণ সম্পন্ন করেছেন। ই-টিআইএন হেল্পডেস্কও প্রথম সরকারি উদ্যোগ যেখানে মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য সাহায্য চাইতে পারেন। এ হেল্পডেস্কের মাধ্যমে গ্রাহক যেকোন ই-টিআইএন সম্পর্কিত তথ্য / সহায়তার জন্য কল করতে পারবেন।
হেল্পডেস্ক এ পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখের বেশি করদাতাকে ই-টিআইএন নিবন্ধকরণে সহায়তা করেছে। এ প্রক্রিয়ায় কর দানকারী নাগরিকের জীবনকে অনেক সহজ এবং মূল্যবান সময় সাশ্রয়ী করে তুলেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট কাজী মুহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, “ডিজিটাল এনবিআর এর যাত্রায় ই-টিআইএন ছিলো অন্যতম সফল প্রকল্প। ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক করদাতাগণ ঘরে বসে অনলাইনে আবেদনসহ ই-টিআইএন সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে পারছে এবং এই ডিজিটাল সার্টিফিকেট সকল প্রতিষ্ঠানে গ্রহণযোগ্য হচ্ছে, এটি নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এরকম প্রকল্পগুলো দেশীয় কোম্পানী করছে যেটি ডিজিটাল বাংলাদেশ তৈরীর সফল পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। সিনেসিস আইটির প্রযুক্তিগত দক্ষতা ই-টিআইএন কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কাজ করেছে।”
সিনেসিস আইটির ব্যাবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব আহমেদ চৌধুরী এ সম্মাননা প্রাপ্তি নিয়ে বলেন, “২০০৬ সালে স্বল্পসংখ্যক কর্মী নিয়ে আমারা যাত্রা শুরু করি সিনেসিস আইটির। গত ১৫ বছরে মেধা, একাগ্রতা ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সিনেসিস আইটিকে আজ আমরা এই পর্যায়ে নিয়ে আসতে পেরেছি। আমরা এই স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফর্মেশন সার্ভিসেস বা বেসিসকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। এই ধরনের স্বীকৃতি ভবিষ্যতে আমাদেরকে আরও ভাল কাজের উৎসাহ জোগাবে। এই প্রকল্প দুটি সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি ও লোকবলের দক্ষতা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যার মাধ্যমে সেবাপ্রাপ্তি আরও সহজ হয়েছে। একই সাথে এগুলো মানুষের জীবন-মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ই-টিআইএন-এর কারণে করদাতারা সহজেই কর সংক্রান্ত সেবা পাচ্ছেন। এছাড়া সিবিভিএমপি-এর মাধ্যমে গ্রাহকদের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিতের সাথে সামাজিক নিরাপত্তার দিকটিকেও সমান ভাবে সাহায্য করছে।” ♦