বেঁচে থাকলে আজ ৫০ বছরে পা রাখতেন বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ। ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নানা বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জে তার জন্ম।
মাত্র ৪ বছরের ক্যারিয়ার ছিল সালমান শাহের। এ সময় ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। প্রায় সব চলচ্চিত্র সুপারহিট। ২৫ বছর আগে পরপারে পারি জমান তিনি। তবে আজও ভক্তদের মনে সেই ‘স্বপ্নের নায়ক’-ই রয়ে গেছেন।
আজ তার জন্মদিন। এ দিন তাকে স্মরণ করে সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানারকম পোস্ট দিচ্ছেন ভক্ত-অনুরাগীরা-তারকারা।
শাবনূর বলেছেন, ‘প্রতিবছর এই দিন কোটি ভক্তের হৃদয় আলোড়িত করে সালমান শাহ ফিরে আসেন ক্ষণিকের জন্য। অকাতর ভালোবাসার অঞ্জলি নিয়ে ফিরে যান অযুত নক্ষত্রের ভিড়ে। ভালো থেকো প্রতিদিন, সালমান শাহ, যেখানেই আছ। শাবনূর।’
পরীমনি লেখেন, ‘শুভ জন্মদিন সালমান শাহ।’
শাকিব খান ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘দ্যুতিময় এক শিল্পীর নাম সালমান শাহ।’
সালমান শাহের প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। টেলিভিশন নাটক দিয়ে তার অভিনয় জীবন শুরু হলেও নব্বইয়ের দশকে তিনি চলচ্চিত্রে অন্যতম জননন্দিত শিল্পী হয়ে উঠেন।
১৯৯৩ সালে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত মুক্তি পায়। এ ছবিতে নায়িকা মৌসুমী ও গায়ক আগুনের অভিষেক হয়।
তার পিতা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। তিনি পরিবারের বড় ছেলে। যদিও তার জন্মনাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন, কিন্তু চলচ্চিত্র জীবনে তিনি সবার কাছে সালমান শাহ বলে পরিচিত।
সালমান পড়ালেখা করেন খুলনার বয়রা মডেল হাইস্কুলে। একই স্কুলে চিত্রনায়িকা মৌসুমী তার সহপাঠী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি রাজধানীর ধানমন্ডি আরব মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ধানমন্ডির মালেকা সায়েন্স কলেজ (বর্তমান ডক্টর মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ) থেকে বি.কম. পাস করেন।
সালমান ১২ আগস্ট ১৯৯২ সামিরা হককে বিয়ে করেন। সামিরা হক ছিলেন একজন বিউটি পার্লার ব্যবসায়ী। তিনি সালমানের ২টি চলচ্চিত্রে তার পোশাক পরিকল্পনাকারী হিসেবে কাজ করেন।
১৯৮৫ সালে বিটিভির আকাশ ছোঁয়া নাটক দিয়ে অভিনয় শুরু করেন সালমান। পরে দেয়াল (১৯৮৫), সব পাখি ঘরে ফিরে (১৯৮৫), সৈকতে সারস (১৯৮৮), নয়ন (১৯৯৫), স্বপ্নের পৃথিবী (১৯৯৬) নাটকে অভিনয় করেন।
নয়ন সে বছর শ্রেষ্ঠ একক নাটক হিসেবে বাচসাস পুরস্কার লাভ করে। এ ছাড়া তিনি ১৯৯০ সালে মঈনুল আহসান সাবের রচিত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত পাথর সময় ও ১৯৯৪ সালে ইতিকথা ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেন।
তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র জহিরুল হক ও তমিজউদ্দিন রিজভী পরিচালিত ’তুমি আমার’ চলচ্চিত্রটি ব্যবসাসফল হয়। পরিচালক জহিরুল হক চলচ্চিত্রটির কিছু অংশ নির্মাণ করার পর মারা যান। পরে তমিজউদ্দিন রিজভী বাকি কাজ শেষ করেন। এ চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মত তার বিপরীতে অভিনয় করেন শাবনূর।
পরে এ জুটি একে একে সুজন সখি (১৯৯৪), বিক্ষোভ (১৯৯৪), স্বপ্নের ঠিকানা (১৯৯৪), মহামিলন (১৯৯৫), বিচার হবে (১৯৯৬), তোমাকে চাই (১৯৯৬), স্বপ্নের পৃথিবী (১৯৯৬), জীবন সংসার (১৯৯৬), চাওয়া থেকে পাওয়া (১৯৯৬), প্রেম পিয়াসী (১৯৯৭), স্বপ্নের নায়ক (১৯৯৭), আনন্দ অশ্রু (১৯৯৭), বুকের ভিতর আগুনসহ (১৯৯৭) ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেন। সব ছবি ব্যবসাসফল।
সালমান শাহ মৃত্যুর আগে মন মানে না ছবির অর্ধেক কাজ শেষ করতে পেরেছিলেন। তার মৃত্যুর পর চিত্রনায়ক রিয়াজকে দিয়ে ছবিটি করানো হয়।
এ ছাড়া কে অপরাধী, তুমি শুধু তুমি, প্রেমের বাজিসহ একাধিক ছবি সালমান শাহ অর্ধেক শুটিং করে মারা যান।
পরবর্তীকালে প্রেমের বাজি ব্যতীত বাকি সিনেমাগুলি অন্য নায়কদের দিয়ে নতুন করে শুটিং করা হয়।
তিনি ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অকালে মৃত্যুবরণ করেন। ♦