আমাদের স্বপ্ন দেখার সঙ্গে সঙ্গে কঠোর পরিশ্রমও করতে হবে। তবেই সফলতার মুখ দেখা যাবে। এ মহামারীতে আমরা যেসব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি এবং এখনও যেভাবে পার করছি, তা থেকে উত্তরণে আমাদের সবাইকে আরও ধৈর্য ধরে কাজ করতে হবে।
ভবিষ্যতে শুভ দিন দেখার অপেক্ষায় তিনি বলেন, “আশাকরি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে এবং ব্যবসা আগের মতোই শক্তিশালী হয়ে উঠবে।”
একান্ত সাক্ষাৎকারে মিনিস্টার গ্রুপের চেয়ারম্যান এম. এ রাজ্জাক খান রাজ ও এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি বর্তমান পরিস্থিতি ও পরিকল্পনা সম্পর্কে কথাগুলো বলেছেন।
মিনিস্টার গ্রুপের যাত্রা শুরুর কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “সাদা-কালো টেলিভিশন দিয়ে যাত্রা করলেও, সাফল্য অর্জনে আমাদের খুব বেশী অপেক্ষা করতে হয়নি। সাদা-কালো টেলিভিশনের সাফল্যের পর আমি মানুষের দোরগোড়ায় স্বল্প ব্যয় এবং কম ভোল্টেজের টেলিভিশন আনার কাজ শুরু করি। তারপর শুরু হয় রঙিন টেলিভিশনের যাত্রা। সে সময় মাইওয়ান টেলিভিশনই একমাত্র ব্র্যান্ড, যা বাংলাদেশে ৭ বছরের ওয়ারেন্টি দেয়। প্রথমদিকে, আমরা মাইওয়ান নামে পরিচিত থাকলেও কীভাবে একটি নতুন নাম দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছানো যায় তা নিয়ে ভাবতে থাকি। এরপর আমরা মিনিস্টার নামটি বেছে নিয়েছিলাম, যা আল্লাহর রহমতে এখন সবার কাছে প্রশংসিত।”
২০০২ সালের ১ জুন মাত্র ৫ জন সহকর্মী ও পাঁচ লাখ টাকার মূলধন নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি ছোট কারখানায় স্বপ্নের প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়।
সিঙ্গাপুরে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ালেখা সম্পন্ন করে তিনি দেশে ফিরে স্থানীয় বহুজাতিক ব্র্যান্ডের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের কারণে আজ একের পর এক নতুন পণ্য বাজারে এনে সবাইকে চমকে দিয়ে সাফল্যের শিখরে রয়েছেন তিনি।
এম. এ রাজ্জাক খান রাজ একজন স্বপ্নদর্শী যিনি ইলেক্ট্রনিকস খাতকে অবিচ্ছিন্নভাবে পুনঃনির্মাণে বিশ্বাসী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার নাম আজ আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
মিনিস্টারের টিভি সম্পর্কে তিনি বলেন, মিনিস্টারের টিভি চোখের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। কারণ এ টিভি চোখের প্রতিরক্ষামূলক প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি। এতে উচ্চগুণগত মানসম্পন্ন প্যানেল রয়েছে যা, বজ্রপাতেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এ টিভিতে ফোরকে ও ফুল এইচডি রেজ্যুলুশন রয়েছে। এ টিভি কম্পিউটার মনিটর হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। মিনিস্টারের টিভির সঙ্গে একটি অতিরিক্ত রিমোট ও একটি ওয়াল হ্যাঙ্গার দেয়া হয়। মিনিস্টারের টিভিতে সাত বছরের ওয়ারেন্টিসহ চার বছরের প্যানেল গ্যারান্টি ও এক বছরের পুনঃস্থাপন গ্যারান্টি রয়েছে।
টিভি ছাড়াও তিনি স্ট্যাবিলাইজারসমৃদ্ধ শক্তি-সঞ্চয়ী রেফ্রিজারেটর নিয়ে আসেন, যা ইতোমধ্যে মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছে। বাজারে এই দামে কার্যকর কম ভোল্টেজের ফ্রিজগুলোর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। গ্রাহকরা এ ফ্রিজের কম্প্রেসারে ১২ বছরের গ্যারান্টি উপভোগ করতে পারছেন।
প্রযুক্তিসম্পন্ন ফ্রিজের জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে তরুণ ব্যবসায়ী নেতা এম. এ রাজ্জাক খানকে বাজারে এয়ার কন্ডিশনার আনতে উৎসাহিত করে।
তিনি বলেন, মিনিস্টার এমন এয়ার কন্ডিশনার তৈরি করছে, যা জ্বালানি সাশ্রয়ী, ইনভার্টার ও ইএস প্রযুক্তি মেনে চলবে। রেফ্রিজারেটরের মতো, এসির কম্প্রেসারগুলোয়ও ১২ বছরের গ্যারান্টি রয়েছে।
এসব পণ্য ছাড়াও তিনি ব্লেন্ডার, রাইস কুকারসহ নানা হোম অ্যাপ্লায়েন্স সরঞ্জাম বাজারে এনেছেন।
কভিড-১৯ এর তান্ডব শুরু হওয়ার পর এম. এ রাজ্জাক খান “মিনিস্টার হিউম্যান কেয়ার” এর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মূলত জনগণের স্বাস্থ্যবিধি ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য। তখন মিনিস্টার সেফটি প্লাস হ্যান্ড ওয়াশ, মিনিস্টার ব্রাইট ওয়াশ ডিটারজেন্ট পাউডার, সেফটি প্লাস গ্লাস ক্লিনার, সেফটি প্লাস ফ্লোর ক্লিনার, চাঁদ ফ্যাব্রিক ব্রাইটেনার (নীল), চাঁদ ডিশ ওয়াশিং লিকুইড ও ফ্ল্যাশ টয়লেট ক্লিনার, ফ্ল্যাশ বাথরুম ক্লিনারসহ নানা পণ্য সমন্বিত নতুন কিছু ব্র্যান্ড চালু করে। এছাড়া দেশ যখন ফেস মাস্কের ঘাটতিতে পড়ে এবং নিম্নমানের মাস্কগুলো চড়াদামে বিক্রি হওয়া শুরু করে, তখন তিনি এদেশের মানুষের কথা চিন্তা করে বাজারে সাশ্রয়ী দামে তিন স্তর বিশিষ্ট সার্জিক্যাল মাস্ক উৎপাদন ও সরবরাহ শুরু করেন। মাস্কটি এরই মাঝে ওষুধ প্রশাসনের অনুমোদন পেয়েছে এবং সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
উল্লেখ্য কভিড-১৯ মহামারীর শুরু থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা, বন্যাদূর্গত এলাকা, চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর পরিমাণ ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি বিনা খরচে মিনিস্টার উৎপাদিত মাস্ক, হ্যান্ড ওয়াশের মত নানা সুরক্ষা পণ্য বিতরণ করেছে মিনিস্টার গ্রুপ। জাতীয় যে কোনো দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে মিনিস্টার গ্রুপ সবসময় মানুষের পাশে থাকে।
এ প্রসঙ্গে এই তরুণ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর জন্য এখন যে লকডাউন চলছে তাতে গরীব, অসহায় ও নিম্নবিত্ত পরিবার তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতেও আমরা হাজার হাজার গরীব, অসহায় ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মাঝে খাবার, ইফতার সামগ্রী ও মিনিস্টার উৎপাদিত মাস্ক সরবরাহ করেছি।
তরুণ প্রগতিশীল এই ব্যবসায়ী মহামারীতে দেশের অর্থনৈতিক মন্দায়ও আশা প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “মিনিস্টার গ্রুপের সব পণ্য আমাদের নিজস্ব কারখানায় উৎপাদিত হয়, যেখানে দেশের তরুণ, মেধাবী, উৎসাহী কর্মীরা সর্বাধিক প্রচেষ্টায় দেশের জন্য একসঙ্গে কাজ করছে।”
এ মহামারীতেও আমাদের কর্মীরা অত্যন্ত যত্ন ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে। আমি মনে করি, আমাদের কোম্পানি গত ১৮ বছর ধরে দেশের যে কোনো পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। “আমার পণ্য আমার দেশ, গড়বো বাংলাদেশ”- এ স্লোগান লালন করে আমরা এগিয়ে চলছি। ♦