পৃথিবীর সবার কাছে আবহাওয়া বিষয়ে ‘জরুরী সতর্ক-বার্তা’ পাঠাবে জাতিসংঘ। ফলে যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আগে থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন সবাই।
জাতিসংঘ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে পৃথিবীর সব ব্যক্তির কাছে সতর্কবার্তা পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে এ সপ্তাহে।
এ বিষয়ে জাতিসংঘ সমাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস বলছেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়। ফলে জীবন বাঁচাতে জরুরী সতর্ক-বার্তা প্রয়োজন। প্রযুক্তির সাহায্যে জনগণের কাছে বিপজ্জনক আবহাওয়ার পূর্বাভাস আগেই পৌছালে ঝড়, বন্যা, দাবদাহ ও খরার মতো দুর্যোগ মোকাবেলায় তারা সতর্ক হবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।”
পৃথিবীতে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন এখনও আগে সতর্ক-বার্তা না পাওয়ায় প্রয়োজনীয় সুরক্ষা নিতে পারছেন না বলে জানিয়েছে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)।
“এটা অগ্রহনযোগ্য, বিশেষ করে জলবায়ুর প্রভাব যখন নিশ্চিতভাবে খারাপের দিকে যাচ্ছে”, ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশ্ব আবহাওয়া দিবসে এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব।
প্রতি ডিগ্রির এক দশমাংশ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে পরিস্থিতি আরও ঝুঁকির দিকে যাচ্ছে। এ কারণে আরও বেশি হারে ঝড়, বন্যা, তাপ প্রবাহ, খরা ও দাবদাহ হচ্ছে।
ইতোমধ্যে, পৃথিবী আবহাওয়ার কিছু বিধ্বংসী পরিবর্তন দেখতে শুরু করেছে। তালিকায় জলবায়ু, আবহাওয়া, অথবা পানি-সংক্রান্ত দুর্যোগের সংখ্যা গত ৫০ বছরে পাঁচগুণ বেড়েছে বলে ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে ডব্লিউএমও।
এসব দুর্যোগের কারণে দৈনিক গড়ে প্রায় ১১৫ জনের মৃত্যু ও প্রতিদিন প্রায় ২২ কোটি ডলার ক্ষতি হয়।
ডব্লিউএমও জরুরী সতর্ক-বার্তা বাবদ আগামী পাঁচ বছরে ১৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ চেয়েছে, বিশেষ করে সেই দেশগুলোর জন্য যাদের এটি সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
বিনিয়োগটি থেকে বড় ধরনের সুফল আশা করছে জাতিসংঘ। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় এ পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রতি ৮০ কোটি ডলার খরচে এক হাজার ছয়শ’ কোটি ডলার পর্যন্ত ক্ষতি এড়ানো সম্ভব বলে দাবি বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার।
দুর্যোগের আগে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে জনগণ প্রস্তুতি নিতে ও আশ্রয় খুঁজতে আরও বেশি সময় পাবে। এমনকি ঝড়ের গতিপথ ও কোন গোষ্ঠীগুলোর সবচেয়ে বেশি সাহায্য প্রয়োজন, পূর্বাভাসকারীরা সেটিরও গণণা করতে পারবেন।
গত ৫০ বছরে জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রেও, এ পদ্ধতি ব্যবহারের সুফল দেখা গেছে। যদিও এখনো আবহাওয়া ও জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্যোগ বাড়ছে, তবে এ সংশ্লিষ্ট মৃত্যুর হার তিন গুণ কমে এসেছে। সঠিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও দুর্যোগের মোকাবেলায় সক্রিয় প্রচেষ্টাকে যেটির কারণ হিসেবে বলছে ডব্লিউএমও।
এ বিষয়ে ‘জরুরী সতর্ক-বার্তা’ পদ্ধতি ব্যবহার করে ঘুর্ণিঝড়ের সময় হাজার হাজার নিশ্চিত মৃত্যু ঠেকানোয় বাংলাদেশের সাফল্যের বিষয়টি প্রশংসিত হয়েছে। ১৯৯১ সালের ঘুর্ণিঝড়ে প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার মানুষের মৃত্যুর ঘটনার পর ঘুর্ণিঝড় শুরুর আগে থেকেই প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করেছে বাংলাদেশ। আগের নীতি বদলে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও জনগণের কাছে তথ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা জোরদার করায় এ উন্নতি হয়েছে।
‘জরুরী সতর্ক-বার্তা’ পাঠানোর বৈশ্বিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে জাতিসংঘ ডব্লিউএমওকে এ বছর নাগাদ একটি ‘পরিকল্পনা’ করতে বলেছে। যেটি আগামী নভেম্বরে মিসরের ‘শার্ম এল-শেখ’-এ অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে দেখাবে সংস্থাটি। ♦