‘সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না এলে বিপদে পড়বে দেশ’, টিকার কেন্দ্র পরিবর্তন নয়

0

কভিড সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না এলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি করুণ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাতে বিপদে পড়তে হবে বলেও জানিয়েছেন অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন। দেশে কভিড সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি চলছে, দিনকে দিন বেড়ে চলেছে মৃত্যুর সংখ্যা।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ যারা অমান্য করছেন, তাদের আরও কঠোর আইনের আওতায় আনার অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে এ অনুরোধ করেছেন অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন।

তিনি বলেন, ‘দেশে জুন মাসে এক লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন রোগী সংক্রমিত হয়েছেন। কিন্তু শুধু জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে প্রায় এক লাখ রোগীকে সংক্রমিত হতে দেখতে পেয়েছি। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি রুখতে সরকার বিধিনিষেধ দিয়েছে। কিন্তু সারাদেশে চলমান লকডাউনের সময়েও অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারা বাইরে যাচ্ছেন, যারা আইন অমান্য করছেন।’

এ লকডাউনের মধ্যে অসংখ্য মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন জানিয়ে অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ‘এ সময় জরুরি কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া এবং জরুরি কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে কেউ বের হলে, তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু যদি কেউ এ আইন অমান্য করেন অথবা সরকারের আদেশ যদি কেউ অমান্য করেন, তাহলে তার জন্য কঠোরতা যেন বৃদ্ধি পায়।’

‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া যারা বাইরে যাচ্ছেন, তাদের প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ থাকবে’ মন্তব্য করে অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ‘আমাদের দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছেন। আমাদের হাসপাতালগুলোর সব খালি বেড খালি হয়ে যাচ্ছে।’

আর এভাবে যদি চলতে থাকে, ‘তাহলে পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ হয়ে যাবে’ বলে আশঙ্কা করেন অধ্যাপক রোবেদ আমিন।

তিনি বলেন, ‘বর্তমান ভ্যারিয়েন্টের মাধ্যমে মৃত্যু শুধু বয়স্ক মানুষের হচ্ছে না, তরুণদেরও হচ্ছে।’

বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে সব জেলায় করোনা ছড়িয়ে পরেছে এবং সংক্রমণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছে, সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা ৭০ জন, চট্টগ্রামে ২০ জন ও রাজশাহীতে ১৩ জন, খুলনায় ৫১ জন মারা গেছেন। শনাক্তের হার ঢাকায় ৪৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, খুলনায় ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় রোগীর চাপ বাড়ছে।’

অধ্যাপক রোবেদ আমিন আরও বলেন, ‘গত মাসে সারা দেশে সংক্রমণের হার অনেক বেশি ছিল। জুন মাসে এক লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন রোগী সংক্রমিত হয়েছেন। শুধু জুলাইয়ের প্রথম ১০ দিনে প্রায় এক লাখ রোগীকে সংক্রমিত হতে দেখতে পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যেভাবে সংক্রমিত হচ্ছি, হাসপাতালে রোগীর চাপ যদি বাড়তেই থাকে, আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে হাসপাতালের শয্যা আর খালি থাকবে না। সারাদেশে গত মাসেও অসংখ্য বেড খালি ছিল, আইসিইউ বেড খালি ছিল। সেই খালি বেডের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। বর্তমানে সারাদেশে মাত্র ৩০০ এর মতো কভিড-১৯ আইসিইউ বেড খালি রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সারাদেশে লকডাউন চলছে। লকডাউন সফল করতে পুলিশ এবং বিজিবির পাশাপাশি সেনাবাহিনীও মাঠে রয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি জরুরি প্রয়োজন ছাড়াও অনেকে বাইরে বের হচ্ছেন।’

আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যদি আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, পরিস্থিতি অত্যন্ত করুণ হয়ে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সংক্রমণের হার এভাবে চলতে থাকলে এক দিনে ১৫ হাজার শনাক্ত হতে বেশি সময় লাগবে না। আর তাতে করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে সবাইকে বিপদে পড়তে হবে।’

এদিকে কভিড-১৯ টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে এখন থেকে আর কেন্দ্র পরিবর্তন করার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আজ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আয়োজিত ভার্চুয়াল বুলেটিনে ভ্যাকসিন বিষয়ক সর্বশেষ তথ্য জানাতে গিয়ে এ কথা বলেন ভ্যাকসিন বিষয়ক ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক।

তিনি বলেন, ‘কেন্দ্র পরিবর্তন করে এখন আর টিকা নেয়ার ব্যবস্থা থাকছে না, এটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যার যে কেন্দ্র রয়েছে, সেই কেন্দ্র থেকেই মোবাইল ফোনে এসএমএস দেয়া হবে।’

রেজিস্ট্রেশন এখন খুলে দেয়া হয়েছে এবং ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে যে কেউ এখন টিকার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিবন্ধনের পর এসএমএস দেয়া হবে এবং তারপর নির্দিষ্ট দিনে কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবেন।’

আর যদি কেউ নির্দিষ্ট দিনের আগে অথবা পরে টিকা নিতে চেষ্টা করেন, তাহলে সবচেয়ে বড় সমস্যা হবে—টিকা নেয়ার তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যভান্ডারে যাবে না। আর তথ্যভান্ডারে না গেলে টিকার দ্বিতীয় ডোজ এবং টিকার সার্টিফিকেট পেতে সমস্যা হবে।’

বিষয়টি সবাইকে বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই জরুরি বিষয়।’

টিকা নিতে হলে অবশ্যই সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে বলে জানান তিনি।

ডা. শামসুল হক বলেন, ‘রেজিস্ট্রেশন করেই আমাদের টিকা নিতে হবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ ভ্যাকসিন নিতে পারবেন না, এ কথাটা বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে।’

এর আগে কোভ্যাক্স সুবিধার আওতায় দেশে ফাইজার বায়োএনটেকের এক লাখ ৬০২ ডোজ টিকা এসেছে।

ঢাকার চারটি মেডিক্যাল কলেজ ও তিনটি বিশেষায়িত হাসপাতালে এ টিকা দেয়া হচ্ছে। এই সাত হাসপাতালে এখন ফাইজারের টিকাই দেয়া হবে। ফাইজারের টিকা শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেখানে মডার্নার টিকা দেয়া শুরু হবে বলে জানান ডা. শামসুল হক।

তিনি বলেন, ‘তবে ঢাকার এই সাত হাসপাতাল বাদে বাকি যে ৪০টি টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে, সেখানে ১৩ জুলাই থেকে মডার্নার টিকা দেয়া শুরু হবে।’

শামসুল হক বলেন, ‘সৌদি আরব এবং কুয়েতসহ অন্যান্য দেশেও মডার্নার টিকা গ্রহণ করা হচ্ছে। তাই প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুরোধ ঢাকার সাতটি কেন্দ্র ছাড়া ঢাকা শহরের অন্যান্য টিকাদান কেন্দ্র এবং দেশের ১২ সিটি করপোরেশন এলাকায় কেন্দ্র বাছাই করার। এতে টিকা নিতে প্রবাসী শ্রমিকদের এখন যে ভোগান্তি হচ্ছে, সেটা আর থাকবে না।’

‘অনেক বিদেশগামী শিক্ষার্থী রয়েছেন, যাদের জন্য টিকা প্রয়োজনীয়,’ বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিতে এনেছি জানিয়ে ডা. শামসুল হক বলেন, ‘এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

শিগগির সুনির্দিষ্ট ধারণা দিতে পারবো এবং কীভাবে তারা টিকা নিতে পারবেন, সে বিষয়ে নির্দেশনা তৈরি করার চেষ্টা করছি।’ অল্প সময়ের মধ্যেই এ বিষয়ে জানানো হবে বলেও জানান ডা. শামসুল হক।

Share.