আফিফ-মিরাজের মহাকাব্যিক ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ানোর অবিশ্বাস্য গল্প লিখলো বাংলার টাইগাররা। সপ্তম উইকেটে এ দুজনের হার না মানা ১৭৪ রানের জুটিতে ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের জয় এলো ৪ উইকেটে।
গতকাল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশকে দেয়া আফগানিস্তানের টার্গেট ছিল নিতান্তই মামুলি। দু’দলের মুখোমুখীর হওয়ার পরিসংখ্যান অনুযায়ী আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের কাছে ২১৫ রান কোনো বিষয়ই নয়। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় এই ছোট লক্ষ্যই বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল টাইগার শিবিরে!
মাত্র ২৭ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পর সবাই ধরে নিয়েছিল বাংলাদেশ আরেকটি লজ্জার হার বরণ করতে যাচ্ছে। তবে সেটি হতে দিলেন না দুই তরুণ আফিফ হোসেন ধ্রুব আর মেহেদি মিরাজ।
৭ম উইকেটে দুজনের অসাধারণ জুটিতে ৪ উইকেটের দারুণ জয়ে সিরিজ শুরু করল বাংলাদেশ।
রান তাড়া করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ১৪ রানের মাঝে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল আর লিটন দাস ফিরে যান। যদিও শুরুটা হয়েছিল আশা জাগানিয়া।
প্রথম ওভারে ফজল হক ফারুকীকে দুই বাউন্ডারি মেরে ৮ রান নিয়েছিলেন তামিম। পরের ওভারে মুজিব উর রহমান দেন মাত্র ১ রান। ফিরতি ওভারে এসেই ফারুকী তুলে নেন লিটনকে। ওভারের তৃতীয় বলে উইকেটকিপার রহমতুল্লাহ গুরুবাজের গ্লাভসবন্দি হন ৮ বলে ১ রান করা লিটন।
একই ওভারের পঞ্চম বলে অধিনায়ক তামিমকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন আফগান পেসার। আউট হওয়ার আগে তামিমের সংগ্রহ ৮ বলে ৮ রান।
১৪ রানে দুই ওপেনার ফেরার পরও বিপদ কাটেনি। উইকেটে এসে ভরসা দেয়ার বদলে ৩ রানে আউট হন দলের আরেক ভরসাস্থল মুশফিকুর রহিম। শিকারী সেই ফজল হক ফারুকী। আম্পায়ার লেগ বিফোরের আবেদনে সাড়া দিলে রিভিউ নেন মুশফিক। কিন্তু সেটি ব্যর্থ হয়। অভিষিক্ত ইয়াসির আলীর সামনে কিছু করে দেখানোর দারুণ সুযোগ ছিল। সেটা তিনি পারেননি।
ফারুকীর চতুর্থ শিকার হওয়ার আগে ইয়াসিরের নামের পাশে ছিলো ৪ বলে ০ রান! আর এতে ‘ডাক’ মেরে শুরু হলো ইয়াসিরের ওয়ানডে ক্যারিয়ার।
ব্যর্থ হয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও। ১৫ বলে ১০ রান করে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে মুজিব উর রহমানের বলে বোল্ড হন সাকিব।
আশ্চর্য হলেও সত্য, দলীয় ২৮ রানে বাংলাদেশের ইনিংস অর্ধেক উইকেট শেষ হয়ে যায়! আফগানিস্তানের বিপক্ষে এর আগে কখনোই এত কম রানে ৫ উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। আগেরটি ছিল ৭৯ রানে ৫ উইকেট। আর সব প্রতিপক্ষ মিলিয়ে বাংলাদেশ সবচেয়ে কম ১২ রানে ৫ উইকেট হারিয়েছিল ২০১২ সালে মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে দলীয় ৪৫ রানে। লেগ স্পিন সুপারস্টার রশিদ খান নিজের প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ৮ রান করা মাহমুদউল্লাহকে গুলবাদিন নাইবের তালুবন্দি করেন, তখন দলের স্কোর একশ পার হবে কিনা সেটা নিয়েই শংকা তৈরি হয় দর্শকদের মাঝে। কিন্তু নাটকীয় মোর হয় তখনই। শেষ দুই স্বীকৃত ব্যাটার আফিফ হোসেন আর মেহেদি মিরাজ টিকে থাকার লড়াই শুরু করেন। এই জুটিতেই ২২তম ওভারের শেষ বলে বাংলাদেশের স্কোর একশ ছাড়িয়ে যায়। ৩০ ওভার শেষে ফ্লাডলাইটের আলো পর্যাপ্ত না হওয়ায় খেলা কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে।
বিরতি থেকে ফিরে ৬৪ বলে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পূরণ করেন আফিফ। তার সঙ্গী মিরাজও ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন ৭৯ বলে। শেষ ৫ ওভারে প্রয়োজন ছিল ২৯ রানের। তবে আফিফ-মিরাজের ব্যাটে সেটা কোনো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়নি। ৭ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
আফিফ ১৫৫ বলে ১১ চার ১ ছক্কায় ৯৩ আর মেহেদি ১২০ বলে ৯ চারে অপরাজিত থাকেন ৮১ রানে। এই দুজনের ব্যাট থেকে অবিচ্ছিন্ন ৭ম উইকেট জুটিতে আসে ২২৫ বলে ১৭৪ রান। ১০ ওভার বল করে ৫৪ রানে ৪ উইকেট নেন ফারুকী। ১টি করে উইকেট নেন মুজিব ও রশিদ।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৯.১ ওভারে ২১৫ রানে অল-আউট হয় আফগানিস্তান। বাংলাদেশি পেসারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং ছিল দেখার মতো। ৩৫ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ২টি করে নিয়েছেন তাসকিন আহমেদ, সাকিব আল হাসান ও শরীফুল ইসলাম। মিরাজ কোনো উইকেট না পেলেও ১০ ওভারে রান দিয়েছেন মাত্র ২৮। সমান ওভারে শরীফুল দিয়েছেন ৩৮ আর তাসকিন ৫৫ রান।
আফগানদের হয়ে ৮৪ বলে সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেন নাজিবুল্লাহ জারদান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৪ রহমত শাহর। ♦