জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সেই দিন নেই। বাস্তবতা এমনই। তবে তাদের এমন সময় ছিল না। আইসিসি কোয়ালিফায়ার্স থেকে উঠে এসে বিশ্বকাপেও তাক লাগিয়ে দেয় দলটি। ক্রমে হয়ে ওঠে দুর্দান্ত এক আন্ডারডগ।
সব ক্রিকেট পরাশক্তির সমীহ আদায় করে জিম্বাবুয়ে। দলটি প্রতিভাময় তারুণ্য নির্ভর ক্রিকেট সক্ষমতার প্রতিশব্দ হয়ে ওঠে। সে সময় এখন যেন কেবলই স্মৃতি!
জিম্বাবুয়ের সোনালী অতীতের এক প্রভা ছড়ানো তারকা সাবেক অধিনায়ক অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল। হাই স্কুলে পড়াকালে জাতীয় দলে খেলা এ ক্রিকেট নক্ষত্রের আজ জন্মদিন।
শুভ জন্মদিন, অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল!
পুরো নাম তাঁর অ্যালিস্টার ডগলাস রোজ ক্যাম্পবেল। রাজধানী হারারে ঘেঁষা সলসব্যারির রোডেশিয়ায় ১৯৭২ সালের আজকের এ দিন পৃথিবীর আলো দেখেন তিনি।
পড়াশোনা শুরু ইগলসভ্যালি হাই স্কুলে। তখন থেকেই ক্রিকেট নেশা মগজে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৯ বছর বয়সে সেঞ্চুরি করেন এ বিষ্ময় প্রতিভা। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট ইতিহাসে এখনও তরুণতম সেঞ্চুরিয়ানের রেকর্ড অ্যালিস্টার আয়ত্তে। জাতীয় দলের নির্বাচকরা তাকাতে বাধ্য হন।
১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নাম আসে। তাঁর ডেব্যু হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে।
বামহাতি ব্যাটার ও ডানহাতি অকেশনাল অফব্রেক বোলার অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল মাঠের ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ করেন ২০০৩ সালে। এর একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা যেতে পারে।
৬০ টি টেস্ট খেলে ২৭.২১ শতাংশ গড়ে তাঁর রান সংখ্যা ২,৮৫৮। সেঞ্চুরি আছে ২টি। অর্ধ শতক ১৮টি। এ ফরম্যাটে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর ১০৩। ক্যাচ গ্রিপের সংখ্যা ৬০।
এবার ওয়ানডে পরিসংখ্যানে আসা যাক। ১৮৮ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন অ্যালিস্টার। ৩০.৫০ শতাংশ গড়ে তাঁর মোট রান ৫, ১৮৫। এর মধ্যে সেঞ্চুরি ৭টি আর অর্ধ শতক ৩০টি। ওয়ানডেতে তাঁর সর্বোচ্চ স্কোর অপরাজিত ১৩১ রান। ক্যাচ ধরেছেন মোট ৭৬টি।
অ্যালিস্টার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছেন মোট ১২৯টি। ৩৩.৮৪ শতাংশ গড়ে তাঁর রান সংখ্যা ৬,৭০১। এর মধ্যে সেঞ্চুরি আছে ১১টি। অর্ধশতক তাঁর ঝুলিতে ৩৮টি। এ ফরম্যাটে তাঁর সর্বোচ্চ রান ১৯৬।
টেস্টে মিডল অর্ডারে ব্যাট করলেও ওপেনিংয়ে নেমে ওয়ানডেতে নতুন বল মোকাবিলা করতেন অ্যালিস্টার। আর তা মোটেও খারাপ হতো না। ১৯৯৩-৯৪ সালে পাকিস্তান সফর এর নজির। স্বভূমে, স্বপিচে ওয়াকার-ওয়াসিম সমৃদ্ধ পেস অ্যাটাকের বিপক্ষে অ্যালিস্টারের অর্ধশতক করেন ৩টি।
১৯৯৪ সালের অক্টোবরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি পেতে পারতেন তিনি। বিধি ভিন্ন কিছু করে। ৯৯ রানে আউট হন রবীন্দ্র পুষ্পকুমারার বলে। বহু প্রতীক্ষার সেই শতক পান ২০০০-০১ সালের ভারত মিশনে নাগপুর টেস্টে। তাঁর আরেকটি টেস্ট সেঞ্চুরি পাকিস্তানের বিপক্ষে।
ওয়ানডেতে বেশি রঙিন বরং অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল। এ ফরম্যাটে পাঁচ হাজারের বেশি রান সাক্ষ্য দেয় তা।
ক্যারিয়ারের সেরা সময় বলা যায় ২০০০ সেশনকে। সে বছর ৩৮.৪০ শতাংশ গড়ে ৯৬০ রান করেন তিনি। তাঁর ৭টি ওয়ানডে শতকের দুটিই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
১৯৯৬ সালে দলের অধিনায়কত্ব পান অ্যালিস্টার। ফল দেখান কয়েক বছর দেরিতে। ১৯৯৮-৯৯ সেশনে পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানকে হারায় তাঁর নেতৃত্বের জিম্বাবুয়ে। ৯৯ এর বিশ্বকাপে সুপার সিক্স ধাপে ওঠার কৃতিত্ব দেখায় দলটি অ্যালিস্টারের অধীনেই। ১৯৯৮ সালে প্রথম বারের মতো আয়োজিত আইসিসি নক আউট ট্রফির প্রথম সেঞ্চুরিয়ান তিনি। ব্যক্তিগত কারণে তিনি ৩ বছর পর অধিনায়কের পদ ছাড়েন।
২০০৩ সালে অবসরের ঘোষণা দেন অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল। কিন্তু ক্রিকেট ছাড়েননি। দায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচকের। ক্রিকেট কমিটির প্রধানের পদও সামলেছেন তিনি। ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পদে নিয়োগ দেয়া হয় তাঁকে।
ভালো, মন্দ মিলিয়েই ব্যক্তি। বর্ণবাদী আচরণের অভিযোগও আছে অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেলের নামে। সে কারণে ক্রিকেট কর্তার পদও ছাড়তে হয়।
এখন অবসর জীবন আর মাঝেমধ্যে ক্রিকেট ধারাভাষ্যে সম্পৃক্ত অ্যালিস্টার। কিন্তু তাঁর মাঠ রাঙানো ক্যারিয়ার জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট উত্থানেরই ইতিহাস। তা মোছার সাধ্য কার? ♦
– হাসান শাওন