আগের বছরের তুলনায় আট গুণ মুনাফা করার পরেও শেয়ারধারীদেরকে কেন মুনাফা দেয়া হবে না, সে জন্য বহুজাতিক কোম্পানি রবি আজিয়াটাকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির বছরে বিনিয়োগকারীদের হতাশ করে বহুজাতিক কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ এমন সিদ্ধান্ত নিলে রবির ব্যাখ্যা চেয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
গতকাল সোমবার রাতে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আজ মঙ্গলবার রাজধানী আগারগাঁয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে বেলা সাড়ে ১২টায় কর্মকর্তাদের ডাকা হয়েছে।
রবির কোম্পানি সচিব শাহিদুল আলম বলেন, ‘আমাদের বিএসইসি থেকে ডাকা হয়েছে। আমাদের একজন প্রতিনিধি মঙ্গলবার সকালে বিএসইসিতে যাবেন।’
কেন এই তলব- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করায় ডাকা হয়েছে বলে জেনেছি।’
সোমবার কোম্পানিটির বোর্ড সভায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য নো ডিভিডেন্ড ঘোষনা করা হয়। এ সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৩৩ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল চার পয়সা। সে হিসেবে ইপিএস বেড়েছে ৭২৫ শতাংশ।
কোম্পানিটি গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করেছে।
টেলিকমিউনিকেশন খাতের আরেক কোম্পানি গ্রামীণ ফোন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রায় এক যোগ পর বেসরকারি খাতের মোবাইল অপারেটর রবি তালিকাভুক্ত হয়। ফলে এ কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে তালিকাভুক্ত হওয়ার মাত্র ১৪ কার্যদিবসে ১০ টাকার শেয়ার উঠে সর্বোচ্চ ৭৭ টাকায়। তারপর ক্রমাগত কমতে থাকে রবির শেয়ারের দর।
সোমবার বোর্ড মিটিংয়ে রবি ভালো লভ্যাংশ দেবে এমন প্রত্যাশায় শেয়ার বিক্রেতা ছিল না এ কোম্পানির। দর ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ দর বেড়ে হয়েছে ৪২ টাকা থেকে হয়েছে ৪৬ টাকায়।
পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ২১ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ মার্চ। অনুমোদন পেলে বিনিয়োগকারীরা কোনো লভ্যাংশ পাবেন না। সাধারণত পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত সাধারণ সভায় পাল্টায় না।
রবির তালিকাভুক্তি নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। বিনিয়োগকারীরাও ভালো মুনাফা পাওয়ার আশায় কিনেছেন কোটি কোটি শেয়ার। কিন্তু কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ এ সিদ্ধান্ত নেয়ার পর পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট নানা ফেসবুক পেজে হতাশার কথা বলছেন বিনিয়োগকারীরা।
৫ হাজার ২৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানি শেয়ারপ্রতি আয় করেছে ৩৩ পয়সা। এ হিসেবে মুনাফা দাঁড়ায় ১৭২ কোটি ৮৫ লাখ ১৮ হাজার টাকার কাছাকাছি। এ আয় কোম্পানিটির বর্তমান রিজার্ভ ১ হাজার ২৩৬ কোটি টাকায় যোগ হবে।
পরিচালনা পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোম্পানির শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য বেড়েছে। গত বছর সম্পদমূল্য ছিল ১২ টাকা ৬৪ পয়সা। গত ৩১ ডিসেম্বর তা বেড়ে হয় ১৩ টাকা ৯০ পয়সা।
পরিচালনা পর্ষদের এই সিদ্ধান্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে দেয়া হবে মঙ্গলবার সকাল ১০টায় লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই।
লভ্যাংশ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ায় মঙ্গলবার রবির শেয়ার মূল্যে কোনো সীমা থাকবে না। এটা বাড়তে পারে যে কোনো অংকে, কমার ক্ষেত্রেও কোনো বিধিনিষেধ থাকবে না।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিশোধিত মূলধন রয়েছে রবির। পরিশোধিত মূলধন ৫ হাজার ২৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এর শেয়ার সংখ্যা ৫২৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকার বেশি।
শেয়ারের ৯০ দশমিক ০৫ শতাংশ উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ২ দশমিক ০৩ শতাংশ শেয়ার। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ধারণ করেছেন ৮ দশমিক ৯২ শতাংশ শেয়ার। ♦