যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ফাইজার ও বায়োনটেকের টিকা ‘বিএনটি১৬২বি২’ নিয়েছেন একজন নার্স। তার নাম সান্দ্রা লিন্ডসে। তিনি বলেন, ‘সুস্থতা ফিরে আসছে।’
যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাস টিকাদান কর্মসূচি চলছে। টিকাকরণের নির্ধারিত দিন ছিল গতকাল সোমবার। গতকালই নিউইয়র্কের কুইন্সে লং আইল্যান্ড জুইশ মেডিকেল সেন্টারের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) কর্মরত নার্স সান্দ্রা লিন্ডসেকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন সান্দ্রা। স্থানীয় সময় সকাল নয়টা ২০ মিনিটে সরাসরি প্রচারিত এক ভিডিও ইভেন্টে করোনার টিকা নেন তিনি।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে গণহারে ফাইজার ও বায়োএনটেক উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকাকরণ শুরু হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জরুরি ব্যবহারের জন্য ‘বিএনটি১৬২বি২’ টিকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
টিকা নেয়ার পর সান্দ্রা বলেন, ভালো লাগছে। আমি ফ্রন্টলাইনের সব কর্মী ও আমার যে সহকর্মীরা বিশ্বজুড়ে এ মহামারি মোকাবিলায় অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আজ আমি আশাবাদী, স্বস্তি অনুভব করছি। মনে হচ্ছে যে, নিরাময় চলে এসেছে। আশা করছি, এর মধ্য দিয়ে আমাদের ইতিহাসের এক ব্যথাতুর সময় অবসানের শুরু হল।
তিনি আরো বলেন, এ টিকা নেওয়াটা অন্য কোনো টিকার চেয়ে আলাদা কিছু মনে হয়নি। কোনো যন্ত্রণাও অনুভব করিনি।
টিকাকরণের আনন্দে নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বলেন, এ টিকা মানবতাকে অশুভ শক্তির আক্রমণের রক্ষাকবচ। এর মধ্য দিয়ে করোনাভাইরাস-বিরোধী যুদ্ধের সফল সমাপ্তি হবে।
এর আগে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) জরুরি ব্যবহারের জন্য ফাইজার ও এর পার্টনার বায়োএনটেকের করোনাভাইরাস টিকা অনুমোদন দেয়। এরমধ্যে সোমবারই টিকার ৩০ লাখ ডোজ দেশজুড়ে বিতরণ করা হয়েছে।
গতকাল যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে প্রায় ১৫০টি হাসপাতাল এই টিকা পেয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের টিকাদান প্রকল্পে আগামী এপ্রিলের মধ্যে ১০ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞের টিকা গ্রহণের মধ্য দিয়ে লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যে শুরু হয় এ কার্যক্রম। দিনটিকে ঐতিহাসিক আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ৯৫ শতাংশ কার্যকারিতা পাওয়া টিকাটি নিরাপদ উল্লেখ করে অন্যদেরও এটি নিতে উদ্ধুদ্ধ করছেন চিকিৎসকরা।
লিন্ডসের টিকা নেয়ার কিছুক্ষণ পর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটে বলেন, ‘প্রথম টিকা দেওয়া হল যুক্তরাষ্ট্রে। অভিনন্দন। বিশ্বকে অভিনন্দন।’
বিএনটি১৬২বি২
‘বিএনটি১৬২বি২’র ক্ষেত্রে একেবারে ভিন্ন ধরনের একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধীব্যবস্থাকে প্রশিক্ষিত করে তোলার জন্য ভাইরাসটির জেনেটিক কোড শরীরে ইনজেক্ট করা হয়।
এ টিকা দেওয়ার ফলে মানবদেহে অ্যান্টিবডি ও রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার আরও একটি অংশ, যা টি সেল নামে পরিচিত সেটিও তৈরি হয়।
তিন সপ্তাহ ব্যবধানে টিকাটির ২য় ডোজ দিতে হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার সাত দিন পর ভাইরাসটি প্রতিরোধে মানবদেহে ৯০ শতাংশ সক্ষমতা তৈরি হয়।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ৯৫ শতাংশ সক্ষম এ টিকাটি যেসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে দশকের বেশি সময় লেগে যায়, সেখানে মাত্র ১০ মাসে আবিষ্কারের প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হলো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকার প্রয়োগ শুরু হলেও মানুষজনকে এখনো সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে ও করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাত ধোয়া ও মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সে সঙ্গে উপসর্গ দেখা গেলে পরীক্ষা করাতে হবে, বিচ্ছিন্ন থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, অন্তঃসত্ত্বা নারীরা আপাতত এ টিকা নিতে পারবেন না। ♦