যুক্তরাষ্ট্রের আপিল আদালত বৃহৎ ব্যবসায়ের স্বার্থে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কোভিড-১৯ টিকা নীতি পুনর্বহাল রেখেছেন। গত শুক্রবার দেশটির ওহিও অঙ্গরাজ্যের চিনচিনাটি শহরের আপিল আদালতের সিক্সথ ইউএস সার্কিট কোর্ট এ নির্দেশনা দেন। খবর রয়টার্স।
এর আগে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে টিকা নেয়ার ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের একটি পরিকল্পনা আটকে দেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আপিল আদালত। বাইডেনের ওই পরিকল্পনায় ১০০ জনের বেশি কর্মী রয়েছে এমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সবাইকে বাধ্যতামূলক টিকা নেয়া অথবা সাপ্তাহিক করোনা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার কথা বলা হয়েছিল। সম্পূর্ণ ডোজ না নেয়া কর্মীদের মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়। তবে রিমোট ওয়ার্কারদের বেলায় এসব নিয়ম শিথিল ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ওএসএইচএ) কর্তৃপক্ষ, এ আদেশ জারি করেছিল। এতে প্রায় ৮ কোটি আমেরিকান কর্মী কোভিডজনিত স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আসবে বলে জানিয়েছিল ওএসএইচএ। এ আদেশ আগামী বছর ৪ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। গত নভেম্বরে এ টিকা নীতির আদেশ দেন আপিল আদালত।
এরপর টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক করার বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করে যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচটি রিপাবলিকান শাসিত অঙ্গরাজ্য। এ পাঁচ অঙ্গরাজ্য হচ্ছে- টেক্সাস, লুইজিয়ানা, মিসিসিপি, সাউথ ক্যারোলিনা ও উটাহ। এছাড়া বেশ কয়েকটি ধর্মীয় ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও বাইডেন প্রশাসনের এমন নীতির বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করে।
তারা বলেন, ওএসএইচএয়ের জরুরি অবস্থা জারির অধিকার নেই। আদালত বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের এমন পরিকল্পনা বা টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক করার আইন গভীর উদ্বেগজনক। এ আইন সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আদালতে তারা বাইডেনের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ব ও এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অভিযোগ উত্থাপন করেন। এতে কর্মীদের স্বাধীনতা হরণ করা হবে। তাদের ক্ষতি হবে। তাই আদালত বাইডেনের এমন পরিকল্পনা স্থগিত দেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে তার কর্মীদের টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক করেছে। তবে বাইডেন বিরোধীরা বলছেন, টিকা নেয়ার ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের এ ধরনের আদেশ দেয়া অসাংবিধানিক।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেন বলেছিলেন, তার এ পরিকল্পনা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ‘ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড’ নিশ্চিত করবে। একমাত্র টিকার মাধ্যমে মহামারি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। অবশেষে তারই জয় হল; গতকাল তার টিকা নীতি পুনর্বহাল করলেন আপিল আদালত।
বিচারক জুলিয়া স্মিথ গিবসন তার রায়ে বলেন, কর্মক্ষেত্রে কোভিড-১৯-এর বিস্তার সম্পর্কে অবগত ওএসএইচএ। এ কারণে কর্মীদের নিরপদ কর্মস্থল উপহার দিতে তারা এ টিকা নীতি প্রণয়ন করেছে। তাই টিকা গ্রহণ ও পরীক্ষানিরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
বিচারক গিবসন আরও বলেন, টিকা নীতি পুনর্বহালের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়নি। বরং বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারী রোধে আরও একটি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হল।
গিবসনকে মনোনীত করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ (রিপাবলিকান)। বিচারক জেন ব্রানস্টেটার স্ট্রাঞ্চ তার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। স্ট্রাঞ্চকে নিয়োগ দিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা (ডেমোক্রাট)। আপিল আদালত নিয়ন্ত্রণ করছেন রিপাবলিকানদের বিচারকমণ্ডলী। ওএসএইচএ’র টিকা নীতির বিরোধিতা করেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনীত বিচারক জোয়ান লারসেন। তিনি বলেন, কংগ্রেসের এমন নীতি চাপিয়ে দেয়ার এখতিয়ার নেই। টিকা নেয়নি এমন কর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে গুরুতর বিপদে পড়বেন না টিকা নেয়া কর্মীরা।
তবে এসব দাবি নাকোচ করে সেই টিকা নীতি বহালে স্বস্তি প্রকাশ করেছে হোয়াইট হাউজ। এক বিবৃতিতে হাউজ বলেছে, ওমিক্রন ঝুঁকিতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি সুখবর। ব্যবসায়ের স্বার্থে কর্মীদের সুরক্ষায় টিকা নেয়ার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার প্রমানিত হলো।
তবে রিপাবলিকান শাসিত রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারলরা ও ব্যবসায় গোষ্ঠীরা এ আইনের বিরুদ্ধে দেশটির উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। আরকানসাসের অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, খুবই হতাশাজনক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কেননা এ আইনের ফলে অনেক কর্মীকে বাধ্যতামূলক টিকা নিতে হবে অথবা চাকরি হারাতে হবে।
সাউথ ক্যারোলিনার অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যালান উইলসন যিনি রিপাবলিকান অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান এক টুইটে বলেন, এ নীতি আবার স্থগিত করা হবে। ♦