তথ্য সুরক্ষায় গুরুত্ব দেয়া ও সুরক্ষার সহজ পথ দেখানোর মতো বিষয়গুলোয় জোর দিতে প্রতি বছরের ২৮ জানুয়ারি উদযাপন করা হয় বিশ্ব তথ্য সুরক্ষা দিবস বা ওয়ার্ল্ড ডেটা প্রাইভেসি ডে।
বিশ্বে অসংখ্য মানুষের দিনের অনেকেটা সময় কাটে অনলাইনে। বেশিরভাগ কাজ হয় অনলাইনে। প্রতিদিন অসংখ্য তথ্য অনলাইনে আদান প্রদান হয়, যার পুরোটা তথ্য নির্ভর। অনলাইনে তাই নিজের তথ্য সুরক্ষিত রাখাটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
২০০৮ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় প্রথম পালিত তথ্য সুরক্ষা দিবস। ইউরোপের ‘ডেটা প্রোটেকশন ডে’ উদাযাপনের বিস্তারের মাধ্যমে এ দিবস চালু করা হয়।
১৯৮১ সালের ২৮ জানুয়ারিতে কনভেনশন ১০৮-এ স্বাক্ষরের মাধ্যমে স্বীকৃতি পায় এ দিবস। আইনি প্রক্রিয়া মেনে গোপীয়নতা ও তথ্য সুরক্ষা বিষয়ে এটিই প্রথম আন্তর্জাতিক চুক্তি।
তথ্য সুরক্ষা দিবস উদযাপনে তাই ২৮ জানুয়ারিকে বেছে নেয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি দিনটিকে “ন্যাশনাল ডেটা প্রাইভেসি ডে” হিসেবে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস। ইউরোপে এ দিনটিকে বলা হয় ‘ডেটা প্রোটেকশন ডে’।
আনুষ্ঠানিকভাবে এই দিনটির প্রচারণা চালায় ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি অ্যালায়েন্স (এনসিএসএ)।
এ দিবসে কীভাবে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার হচ্ছে, মজুদ করা হচ্ছে বা শেয়ার করা হচ্ছে- এসব বিষয়ে অনেকে সচেতন নয়। গ্রাহককে শক্তিশালী করা ও প্রতিষ্ঠান যাতে তথ্য সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেয় সে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়া এর মূল লক্ষ্য।
-দিবসটির এ বছরের উপাত্ত-
তথ্য সুরক্ষা দিবসের এ বছরের লক্ষ্য তথ্যের মূল্যে আলোকপাত করা। আপনি যদি ব্যক্তিগতভাবে নিজের গোপীয়নতা আরো ভালোভাবে ব্যবস্থাপনা করতে চান ও আপনার তথ্য কীভাবে সংগ্রহ হচ্ছে তা জানতে চান কিংবা কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তথ্য সংগ্রহ করছে, মজুদ করছে ও সেগুলো ব্যবহার করছে, তখন মনে রাখবেন, ব্যক্তিগত তথ্য অর্থের মতোই মূল্যবান।
চলতি বছর ওয়েব কনফারেন্সে তথ্য সুরক্ষা উদযাপন করছে এনসিএসএ।
-ব্যক্তিগতভাবে তথ্য সুরক্ষায় নানা পদক্ষেপ-
* কেনাকাটার হিসেব, আইপি অ্যাড্রেস বা লোকেশন ব্যবসার ক্ষেত্রে মহামূল্যবান, অর্থের মতো। তাই নানা প্রতিষ্ঠানের সেবায় নিজের তথ্য দেওয়ার আগে বিবেচনা করে দেখুন কাকে তথ্য দিচ্ছেন। এ তথ্য বিনিময়ে আপনি যে সেবা পাচ্ছেন তা যথেষ্ট কিনা ভেবে দেখুন।
* সেবা ব্যবহার করতে দেয়ার আগে লোকেশন, কন্টাক্টস লিস্ট ও ছবির মতো তথ্য চায় অনেক অ্যাপ। তথ্যগুলো কাদের হাতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে সচেতন হন। ইন্টারনেটে সংযুক্ত ডিভাইসগুলো থেকে অব্যবহৃত অ্যাপ মুছে ফেলুন। বাকী অ্যাপ আপডেট রাখুন। তাহলে নিরাপদ থাকবে তথ্য।
* ওয়েব সেবা ও অ্যাপের গোপনীয়তাসহ নিরাপত্তা সেটিংস দেখুন। তথ্য শেয়ারের ফিচারগুলো আপনাকে স্বস্তি দেবে, এমন রাখুন। একেকটি অ্যাপ ও সেবার গোপনীয়তা ফিচার আলাদা। সময় নিয়ে এগুলো ঠিক করুন।
-ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের করণীয়-
* তথ্য সংগ্রহের পর তা সুরক্ষিত রাখুন। তথ্য ফাঁস হলে শুধু আর্থিক ক্ষতি নয়, সম্মান ও গ্রাহকের আস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে যৌক্তিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিন। গ্রাহকের তথ্য ন্যায্য উপায়ে সংগ্রহ করা হচ্ছে ও এর কারণ বৈধ, তা নিশ্চিত করুন।
* গোপনীয়তার একটি কর্মকাঠামো তৈরি করুন। গবেষণা ও নীতিমালা দিয়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি কর্মকাঠামো প্রস্তত করুন। প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গোপনীয়তার সংস্কৃতি গড়ে তুলুন।
* নিজ প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহের চর্চা যাচাই করে দেখুন। বোঝার চেষ্টা করুন, আপনার ব্যবসায়ের ওপর কোন নীতিমালা আরোপ হয়। ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা কর্মীদের প্রশিক্ষিত করুন।
* কীভাবে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার ও শেয়ার করা হচ্ছে, সে বিষয়ে স্বচ্ছ থাকুন। আপনার প্রতিষ্ঠানের কাছে গোপনীয়তার বিষয়টি কেমন সে বিষয়ে সাধারণ মানুষের কাছে স্বচ্ছ থাকুন।
* ধরুন, একজন ব্যক্তি আপনার হয়ে সেবা দিচ্ছেন, সেক্ষেত্রে তিনি কীভাবে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য জোগাড় ও ব্যবহার করছে, সে বিষয়ে আপনিও দায়বদ্ধ। ♦