প্রথা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা নেয়ার পর দ্রুত কিছু নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। ব্যতিক্রম নন নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার প্রথম দিন পূর্বসূরী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত বাতিল করবেন জো বাইডেন। এর পরিবর্তে নতুন নির্দেশ দেয়ার পরিকল্পনা করেছেন তিনি। খবর এপি’র।
কংগ্রেসের অনুমোদনের অপেক্ষায় না থেকে নির্বাহী আদেশবলে ১০ দিনের তড়িৎ পদক্ষেপের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের আবহ থেকে বেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন দিশা দিতে চান জো বাইডেন।
-নির্বাহী আদেশ-
* প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর মুসলিম প্রধান কয়েকটি দেশ থেকে অভিবাসনে ট্রাম্পের দেয়া বিধিনিষেধ তুলে নেবেন।
* যুক্তরাষ্ট্রের আবার প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা থাকবে।
প্রসঙ্গত, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির হার প্রাক শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি যেন না হয়, সেজন্য নিঃসরণের মাত্রা সম্মিলিতভাবে কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করা হয়েছে ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে। এখন পর্যন্ত ১৮৯ দেশ ওই চুক্তিতে অনুস্বাক্ষর করেছে। ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার ছয় মাসের মধ্যে এ চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়ে পুরো বিশ্বকে হতাশ করেন ট্রাম্প। তার ওই ঘোষণা কার্যকর হয় গত বছরের ৪ নভেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক পরদিন। ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন ভোটের প্রচারের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস চুক্তিতে ফিরিয়ে আনবেন।
* ফেডারেল কার্যালয়গুলো ও এক অঙ্গরাজ্য থেকে অন্য অঙ্গরাজ্যে গেলে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করবেন।
* শিক্ষাঋণ আদায়ে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা বাড়াবেন।
* মহামারিতে বিপর্যস্ত ব্যক্তিদের যেন ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ না করা হয় সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন। অর্থাৎ আবাসন ঋণের কিস্তি শোধ না হলেও উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
* প্রথম অফিসের দিন আগামী বুধবার (২০ জানুয়ারি) বাইডেন অভিবাসন সংস্কার বিল আনতে পারেন।
* পরদিন বৃহস্পতিবার করোনা-সংক্রান্ত আদেশে সাক্ষর করতে পারেন। এতে স্কুল কলেজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলাসহ করোনার নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত থাকবে।
* শুক্রবার মহামারির কারণে যারা আর্থিকভাবে ভুগছেন তাদেরকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়টি দেখবেন।
* পরের সপ্তাহে অপরাধ বিচার সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসন নিয়ে উদ্যোগী হতে পারেন।
* ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তের যাঁরা পরিবারহারা হয়েছেন, তাদের মিলন তরান্বিত করতে সরাসরি আদেশ দিতে পারেন।
অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের জন্য ১ দশমিক ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের যে প্রণোদনার প্রস্তাব বাইডেন ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন, তা কংগ্রেসে পাস করাতে বেশ বেগ পেতে হবে। কারণ প্রতিনিধি পরিষদের আসনের দিক দিয়ে তার দল ডেমোক্রেটিক পার্টি এগিয়ে থাকলেও রিপাবলিকানদের সঙ্গে তাদের ব্যবধান সামান্য।
নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা নেওয়ার পর দ্রুততার সঙ্গে কিছু নির্বাহী আদেশে সাক্ষর করেন ট্রাম্প। কিন্তু তার বহু আদেশ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। আদালতও কিছু আদেশ বাতিল করে। বাইডেনের বেলায় তেমনটি হবে না বলে আশাবাদী ডেমোক্রাটরা। কেননা তার এসব আদেশের বিপরীতে সুপ্রতিষ্ঠিত আইনি তত্ত্ব রয়েছে। এগুলো প্রেসিডেন্টের সাংবিধানিক দায়িত্বের আওতাধীনও বটে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জো বাইডেনের প্রথম দিনের প্রতিশ্রুতির একটি বড় অংশের বাস্তবায়ন শুরু হয়ে যাবে অভিষেকের পরের নয় দিনের মধ্যে। বাইডেনের এসব নির্বাহী আদেশে সংকটকালে সংগ্রামরত লাখো আমেরিকানের মুক্তি মিলবে। ♦