প্রস্তাবিত বাজেটে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি

0

ভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইকে মূল অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হলেও সংক্রামণ ঠেকাতে বাজেটে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ ও স্বাস্থ্যবিধি উপখাত যথাযথ গুরুত্ব পায়নি। ফলে মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই ও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে।

ওয়াটারএইড, ইউনিসেফ, পিপিআরসি, ফানসা-বিডি, এফএসএম নেটওয়ার্ক, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অল, ওয়াশ অ্যালায়েন্স ও এমএইচএম নেটওয়ার্কের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ কথা বলেন।

এসডিজি লক্ষ্য অর্জনে স্বাস্থ্যবিধি উপখাতে যথাযথ
গুরুত্বারোপসহ গ্রাম ও শহরের মধ্যে ওয়াশ খাতে বিনিয়োগ ও বরাদ্দের বৈষম্য কমানোর পাশাপাশি ন্যায়সঙ্গত বরাদ্দ দেয়ার উপর অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন বলে মত দেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এসডিজি ৬ অর্জনের গতি আরও ত্বরান্বিত করার জন্য অসমতা দূর করে জাতীয় বাজেটে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর আহবান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ ও ব্যয়ের বিশ্লেষনে দেখা যায়, বিগত বছরগুলোর বাজেটে ওয়াশ খাতে আর্থিক বরাদ্দের ধারা ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও ২০২১-২২ অর্থবছরে তা কিছুটা কমেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের বরাদ্দ ১২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা কমিয়ে ২০২১-২১ অর্থবছরে ১১ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা করা হয়েছে।

সারা বছর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় ২০২১-২২ অর্থবছরেও স্বাস্থ্যবিধি (হাইজিন) উপখাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দকে উপেক্ষা করা হয়েছে।

এছাড়া প্রস্তাবিত ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের একটা বড় অংশই শহরাঞ্চলের দিকে ঝুঁকছে, যা মূলত প্রধান শহরগুলোয় ওয়াসার বরাদ্দর কারণে হয়েছে। গ্রামীণ অঞ্চল ও দেশের দুর্গম এলাকাগুলো বরাদ্দের ক্ষেত্রে যথেষ্ট উপেক্ষিত হয়েছে। বর্তমানে, কভিড -১৯ সংক্রমণের হার জেলাগুলোয় উল্লেখযোগ্য উর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে ভাইরাসের সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্যবিধি ও ওয়াশ সোবর সম্প্রসারণে গুরুত্বারোপ প্রয়োজন।

ভৌগলিক অবস্থান বিচারে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রেও রয়েছে অসমতা। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈষম্য শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের মধ্যে, ৪টি ওয়াসা এবং ১১ টি সিটি করপোরেশনে ওয়াশ খাতে বেশিরভাগ বরাদ্দের ধারা অব্যাহত রয়েছে। গ্রামাঞ্চল, চর, দুর্গম এলাকাগুলোয় ওয়াশ বাজেট বরাদ্দের বিপরীতে শহর ও মহানগরগুলোয় তুলনামূলক বরাদ্দের হার অনেক বেশি।

শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের বরাদ্দ বিশ্লেষনে দেখা যায়, গত পাঁচ বছর সময়কালে শহরে (৮০ – ৮৩ শতাংশ) ও গ্রামীণ অঞ্চলে (২০ -১ শতাংশ) বরাদ্দের হারের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।

এ বিষয়ে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পিপিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “ওয়াশ বরাদ্দের ক্ষেত্রে ভৌগলিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। তার পরও গ্রামাঞ্চল, চর, পার্বত্য অঞ্চল ও উপকূলীয় এলাকার তুলনায় শহর ও মহানগরগুলোয় পূর্ববর্তী বছরগুলোর বরাদ্দ অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওয়াশ সেক্টরে বরাদ্দ বাড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া হলেও সঠিক বরাদ্দ এখনও অবহেলিত।”

সংবাদ সম্মেলনে ওয়াটারএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, ‘২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশে উৎপাদিত স্যানিটারি ন্যাপকিনের উপর সমুদয় মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) অব্যাহতি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। স্যানিটারি ন্যাপকিনের ওপর সরকারের ভ্যাট মওকুফের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্তের পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য এখনই প্রয়োজন একটি পরিবীক্ষণ ব্যবস্থার। এতে সরকারী এ মহতী ঘোষণার ফল কিশোরী এবং নারী উভয়ই পেতে পারবে।’

সংবাদ সম্মেলনে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে সম্মিলিতভাবে কয়েকটি সুপারিশ উল্লেখ করা হয় সুপারিশে বলা হয়, কভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত খাতগুলোকে একত্র করে ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

একই সঙ্গে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ওয়াশ খাতের স্বতন্ত্র উপখাতগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যবিধিকে একটি আলাদা উপখাত হিসেবে চিহ্নিত ও বরাদ্দের ক্ষেত্রে পৃথক উপ-বিভাগীয় লাইন-আইটেম হিসাবে হাইজিন আলাদা করার সুপারিশ করা হয়।

এছাড়া গ্রাম ও শহরের মধ্যে এবং বিভিন্ন নগরীরর মধ্যে বরাদ্দের ক্ষেত্রে যে বিপুল বৈষম্য রয়েছে তা দূর করতে ওয়াশ খাতের বরাদ্দের অগ্রাধিকার নির্ধারণে পুনর্বিবেচনা করার কথাও বলা হয়।

পাশাপাশি নিরাপদ পানি সম্পর্কিত পরিবেশ ও ঝুঁকি হ্রাস প্রকল্পের জন্য নেয়া উদ্যোগগুলো প্রশংসনীয়, তবে দুর্যোগ-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল, বিশেষত দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এসব প্রকল্পের পরিধি বাড়াতে হবে। বিশেষ করে বন্যা প্রবণ ও ঘূর্ণিঝড় প্রবণ উপকূলীয় এলাকায় প্রকল্প বাড়ানোর কথা বলেছেন বক্তারা।

সবশেষে ভালো নীতি থাকলেও বাস্তবায়নের ঘাটতির জন্য অনেক ক্ষেত্রে ভালো ফল মিলছে না বলে জানান তারা। এ ক্ষেত্রে ওয়াশ খাতে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা উন্নয়নকে অগ্রাধিকার হিসাবে চিহ্নিত করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতার দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে বরাদ্দের ক্ষেত্রেও জাতীয় সক্ষমতা উন্নয়নের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলা হয় সুপারিশে।

ডাউনলোডঃ পলিসি ব্রিফ – বাংলাPPT

প্রেস কনফারেন্স দেখতে ক্লিক করতে পারেন fb.watch

Share.