থার্মোমিটার যেমন আপনার দেহের তাপমাত্রা দেখায়, ঠিক তেমন দেহে অক্সিজেনের মাত্রা মাপে অক্সিমিটার। কোভিড-১৯-এর কারণে শিয়রে সংকট পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে দেশে। আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে মৃত্যু মিছিল। দ্বিতীয় তরঙ্গে যে সব রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাদের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে।
চিকিৎসকরা কোভিড চিকিৎসা করতে গিয়ে লক্ষ্য করেছেন এ মুহূর্তে গুরুতর জটিলতা হল শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস হয়ে যাওয়া। আর সঠিক সময়ে নির্দিষ্ট চিকিৎসা না করাতে পারলে রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে।
এবার আপনি ভাবতেই পারেন রোগীর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কখন কেমন থাকবে, তা আপনি টের পাবেন কী করে! সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের দাবি বাড়িতে একটা ভালো অক্সিমিটার রাখতে হবে। অক্সিমিটার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কখন কেমন থাকছে তার সম্পর্কে আপনাকে অবগত রাখবে। তাই নিজেকে আপডেট রাখতে সঙ্গে অক্সিমিটার রাখা জরুরি।
আজকাল সব বড় হাসপাতালে এ ধরনের গ্যাজেট ব্যবহার করা হয়।
পালস অক্সিমিটার হল একটি ছোট ডিভাইস যেটা একটা কাপড় মেলার ক্লিপের মতো দেখতে। এ ডিভাইসে হাতের একটা আঙুল ঢুকিয়ে রাখার জায়গা রয়েছে। এর সাহায্যে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আপনার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কেমন তা ছোট স্ক্রিনে ফুটে উঠবে (SpO2 পরিমাপে সংখ্যা দেখাবে)।
পালস অক্সিমিটারে আপনার আঙুল রাখলে কিছুক্ষণের মধ্যে দু’টো সংখ্যা দেখা যাবে। একটা এসপিওটু— মানে আপনার শরীরের অক্সিজেন সম্পৃক্ততা। দ্বিতীয়টা আপনার পাল্স রেট।
বেশিরভাগ সুস্থ মানুষদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ শতাংশের ওপর থাকে। আর যাদের শরীরে কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে, তাদের ৯৫ শতাংশের নিচে নামতে শুরু করে। সেক্ষেত্রে রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া ডিভাইসটি প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বিটের মধ্যে একজন সুস্থ ব্যক্তির জন্য হৃদস্পন্দনের মাপ দেখাতে পারে।
শ্বাসকষ্ট যদি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায় তাহলে অবশ্য হাসপাতালে যেতে হবে। এছাড়া নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। কারণ এই মুহূর্তে পরিস্থিতি যা, তাতে সবই যে হাতের নাগালের মধ্যে রয়েছে এমনটা বলা যায় না। ফলে মহামারীর সময়ে সকলে যদি নিয়মিত নিজেদের অক্সিজেনের মাত্রা নিজেরা দেখে রাখেন তাহলে তার থেকে কিছুটা হলেও রোগীকে রক্ষা করা যেতে পারে।
ব্যবহারের নিয়ম
নিখুঁত ফল পেতে যন্ত্রটি যথাযথভাবে ব্যবহার করা জরুরি। যদিও ব্যাপারটি এমন কঠিন কিছু নয়। এর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন নেই। কিছুটা পড়াশোনা থাকলে পালস অক্সিমিটারের ফল নিজেই বুঝতে পারবেন।
-লক্ষ রাখুন-
• মেয়েরা লক্ষ রাখবেন, হাতের নখে নেইল পলিশ আছে কি না। থাকলে তুলে ফেলুন।
• পালস অক্সিমিটার ব্যবহারের আগে অন্তত পাঁচ মিনিট শান্ত হয়ে বসুন।
• এরপর সুইচ চালু করে তর্জনি বা মধ্যমার মাথায় যন্ত্রের এক প্রান্ত টিপে ধরে অপর প্রান্ত ঢুকিয়ে দিন।
• হাত বা অক্সিমিটার যন্ত্র একদম নড়াচড়া করবেন না।
• শুরুতে ফল অস্বাভাবিক মাত্রায় ওঠানামা করতে পারে। অপেক্ষা করুন। অন্তত এক মিনিট সময় নিন।
• এবার সর্বোচ্চ মাত্রায় পাঁচ সেকেন্ড সময় স্থির থাকলে ফল লিখে ফেলুন।
-পালস অক্সিমিটারে অক্সিজেনের মাত্রা-
• ৯৫ থেকে ১০০ শতাংশ—স্বাভাবিক মাত্রা।
• ৯৫ শতাংশের কম—অক্সিজেন ঘাটতি (একে চিকিৎসা পরিভাষায় হাইপোক্সিয়া বলা হয়)।
• ৯০ শতাংশের কম—জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন।
যাঁদের প্রয়োজন
হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিসের মতো শ্বাসতন্ত্রের জটিলতায় ভুগছেন যাঁরা, তাঁদের বাড়িতে অবশ্যই এ যন্ত্র রাখা উচিত। আর এ সময় প্রতিটি বাড়িতেই যন্ত্রটি থাকা ভালো। কারণ করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে নিয়মিত অক্সিজেনের পরিমাণ মাপা দরকার হয়। ♦