যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ওষুধ উৎপাদনকারী অ্যাস্ট্রাজেনেকার পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন প্রথম ভ্যাকসিন হিসেবে চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছেছে। এটি কোভিড-১৯ থেকে মানুষকে কতটা কার্যকর সুরক্ষা দিতে পারে, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে।
বিশ্বজুড়ে করোনায় সংক্রমিত লোকের সংখ্যা ৯৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। এতে বিশ্বজুড়ে ৪ লাখ ৮০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকরা লাইসেন্সকৃত সিএইচএডিওএক্সওয়ান এনকোভ-১৯ (ChAdOx1 nCoV-19) ভ্যাকসিনটি যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার ২৬০ প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুকে দেওয়া হবে। এটি দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলেও পরীক্ষা করা হচ্ছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ১০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য ১০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন প্রস্তুত করছে।
এ ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘সিএইচএডিওএক্সওয়ান’ ভাইরাস, যা মূলত সাধারণ সর্দিকাশির দুর্বল ভাইরাস (অ্যাডেনোভাইরাস) হিসেবে পরিচিত। এটি শিম্পাঞ্জিকে সংক্রমিত করে। গবেষকেরা এ ভাইরাসের জিনেটিক পরিবর্তন করেছেন, যাতে তা মানুষের ক্ষতি না করে।
অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের প্রধান অ্যান্ড্রু পোলার্ড বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, ক্লিনিক্যাল পরীক্ষাগুলো ভালোভাবে এগোচ্ছে। আমরা এখন পরীক্ষা পর্যালোচনা করে দেখছি যে, ভ্যাকসিনটি বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায় কতটা কার্যকর প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে। এটি ব্যাপক জনসংখ্যার মাঝে সুরক্ষা দিতে পারবে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখছি।
ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, পরীক্ষা সফল হলে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপ আশা করছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ তারা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ছেড়ে দিতে পারবে। ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা প্রমাণিত হলে এটি হবে সবচেয়ে দ্রুত তৈরি করা ভ্যাকসিন, যা পরীক্ষাগার থেকে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পাবে।
দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্র অবশ্য শুধু অক্সফোর্ড চেষ্টা করছে না, বিভিন্ন দেশের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী অনেক প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন আনার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২২ জুন পর্যন্ত ১৩ ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে ও ১২৯টি ভ্যাকসিন প্রি-ক্লিনিক্যাল বিবর্তন পর্যায়ে রয়েছে। ১২ জুন পর্যন্ত ১০ ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা পর্যায়ে ছিল। ১১৫ ভ্যাকসিন পরীক্ষা শুরু করার আগের পর্যায়ে। অর্থাৎ ১০ দিনে ভ্যাকসিন পরীক্ষা দ্রুত এগিয়ে গেছে।
বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সায়েন্সে প্রকাশিত ‘পিএলওএস ওয়ান’–এর এক গবেষণা নিবন্ধ অনুসারে, সাধারণত পরীক্ষার প্রাথমিক পর্যায় থেকে ভ্যাকসিন তৈরিতে গড়ে ১০ দশমিক ৭১ বছর সময় লাগে ও সফলতার হার ৬ শতাংশ। ব্যাপক বিনিয়োগের পরেও অনেক ভ্যাকসিনের সাফল্য অধরা থেকে যায়। যেমন এইচআইভি ভ্যাকসিন।
যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না ও চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেকের তৈরি ভ্যাকসিন আগামী মাসে চূড়ান্ত পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু করবে। বেইজিং ভিতবতিক চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ মঙ্গলবার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চালাতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অনুমোদন পেয়েছে। ♦