পরপারে পাড়ি জমালেন গুণি চলচ্চিত্রকার বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত

0

দুই বাংলার সংস্কৃতি অঙ্গনে ফের দুঃসংবাদ, পরপারে পাড়ি জমালেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। আজ বৃহস্পতিবার সকালে দক্ষিণ কলকাতায় নিজের বাসায় মৃত্যু হয় এই পরিচালক ও কবির। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর।

দীর্ঘদিন ধরে কিডনিসংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। ডায়ালাইসিসও চলছিল। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে আজ সকালে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে দুই বাংলার সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ছবি দিয়ে স্মৃতিচারণা করেন অনুরাগীরা।

আজও তার ডায়ালাইসিস হওয়ার কথা ছিল। গতকাল বুধবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। আজ সকালে নিজের ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন তিনি। তার স্ত্রী ঘুম থেকে ডাকতে যান। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চিকিৎসককে ডেকে পাঠান। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর পরিচালককে মৃত ঘোষণা করেন।

বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর জন্ম ১৯৪৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পুরুলিয়ার আনাড়ায়। নয় ভাইবোনের পরিবারে তিনি তৃতীয়। তার বাবা তারাকান্ত দাশগুপ্ত পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। রেলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে কলকাতায় চলে আসেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। হাওড়ার দীনবন্ধু স্কুলে পঠনপাঠন শুরু। অর্থনীতি নিয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজেও পড়াশোনা করেছেন বুদ্ধদেব। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ শ্যামসুন্দর কলেজে অধ্যাপনা করেছেন।

শিক্ষকতা ও সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি চলচ্চিত্রের প্রতি অনুরাগ ছিল। স্বপ্ন দেখতেন ছবি বানাবেন। এ তাগিদেই একসময় কলকাতা ফিল্ম সোসাইটির সদস্য হন। ১৯৬৮ সালে ১০ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র দিয়ে পরিচালনায় হাতেখড়ি। তারপর একে একে ‘দূরত্ব’, ‘নিম অন্নপূর্ণা’, ‘গৃহযুদ্ধ’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘স্বপ্নের দিন’, ‘উড়োজাহাজ’-এর মতো ছবি করেছেন।

তার ছবি বহু জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। ‘বাঘ বাহাদুর’, ‘চরাচর’, ‘লাল দরজা’, ‘কালপুরুষ’সহ একাধিক ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘রোবটের গান’, ‘ছাতা কাহিনি’, ‘গভীর আড়ালে’ ইত্যাদি।

আজ সকালে দুই বাংলার সংস্কৃতিনুরাগীদের মধ্যে শোক নেমে আসে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর মৃত্যুতে। এ পরিচালকের মৃত্যুতে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারের এক শোকবার্তায় মমতা তার নানা প্রাপ্তির দিক তুলে ধরেন তিনি। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত স্পেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড, এথেন্স আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন অ্যাওয়ার্ড, বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে গোল্ডেন বিয়ার পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অজস্র সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। মমতা লিখেছেন, তাঁর মৃত্যুতে চলচ্চিত্রজগতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।

স্বল্পভাষী ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। একমাত্র কাজ নিয়ে নায়িকা ও অভিনেতাদের সঙ্গে তিনি কথা বলতেন। বাকি সময় নিজের মতো চুপচাপ থাকতেন। অনেক পরিচালক শুটিংয়ে আড্ডা দেন অভিনেতা–অভিনেত্রীদের সঙ্গে। বুদ্ধদেব তেমন ছিলেন না। শিক্ষক হিসেবে ভীষণ ভালো ছিলেন। কাজের বিষয়ে ভীষণ খুঁতখুঁতেও ছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। যেটা স্বাভাবিক, সেটাই ক্যামেরাবন্দী করতে ভালোবাসতেন। কবিতাও লিখেছেন।

Share.