পণ্য কিনতে আরও এক কোটি মানুষ পাবেন বিশেষ কার্ড: প্রধানমন্ত্রী

0

স্বল্প আয়ের মানুষের কষ্ট লাঘবে কম দামে পণ্য কিনতে আরও এক কোটি মানুষকে বিশেষ কার্ড দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা টার্গেট করেছি, এক কোটি মানুষকে আমরা স্পেশাল কার্ড দেব। যেটা দিয়ে তারা ন্যায্যমূল্যে জিনিস কিনতে পারবে। যে ৩৮ লাখকে আমরা টাকা দিচ্ছি তারা তো থাকবে, তার বাইরেও আরও এক কোটি লোককে দেব। তাছাড়া ৫০ লাখ লোককে একটা কার্ড দেয়া আছে, সেটা থেকে তারা ১০ টাকায় চাল কিনতে পারে। সেই ব্যবস্থা করা আছে।’

গণভবনে ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা টিসিবি জানিয়েছে, রমজান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০ মার্চ থেকে ‘বিশেষ কার্ডের’ কর্মসূচি শুরু করা হবে। এর আওতায় এক কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারকে ভুর্তকি মূল্যে টিসিবির পণ্য দেয়া হবে। প্রতিটি পরিবার দুই দফায় পণ্য পাবেন। এসব পণ্যের মধ্যে থাকবে সয়াবিন তেল, চিনি, ডাল, ছোলা বুট, পেঁয়াজ প্রভৃতি বলে জানিয়েছেন টিসিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির।

১৪ দলের বৈঠকে সরকারের কাছে যথেষ্ট খাদ্য মজুত আছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, এখনও ১৮ লাখ (টন) খাদ্য মজুত আছে আমাদের। সেখানে কোনো অসুবিধা নেই।’

ফসল উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কারও এতটুকু জমি যেন অনাবাদী না থাকে। যে যা পারেন সেটাই উৎপাদন করেন। প্রত্যেক এলাকায় কিছু না কিছু উৎপাদন হবেই। সেটাই আমার লক্ষ্য। তাতে আমাদের যে খাদ্যচাহিদা সেটা যেন পূরণ করতে পারি।’

ভোজ্যতেলের বাড়তি দামের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তেল নিয়ে যে সমস্যা, সেটা নিয়ে কালকেও মিটিং করেছি ভার্চুয়ালি। সেখানে আমি বলে দিয়েছি, একটা টাস্কফোর্স করা। মজুদ তেলের কোথাও ‘হোল্ডিং’ হচ্ছে কি না তা দেখা হচ্ছে। আর প্রত্যেকটা জায়গায় খোঁজ নেয়া।’

আন্তর্জাতিক বাজারে দাম খুব বেড়ে গেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সয়াবিন তেলটা আমাদের বেশিরভাগই আসে ব্রাজিল থেকে। আর পাম অয়েলটা আসে মালয়েশিয়া থেকে। তো এ যুদ্ধের কারণে যাতায়াত খরচ ও অতিরিক্ত কার্গো ভাড়া বেড়ে গেছে। আনতে অসুবিধা। এ সমস্ত সমস্যা আছে। কিন্তু আমাদের মজত যেটুকু আছে বা এখানে যেটা হচ্ছে, সেটা আমরা খোঁজ নিচ্ছি। কেউ কোনো রকম, অন্য কোনো রকম (কিছু করছে কি না)।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা হয়, দাম বাড়তে দেখলে সবাই মজুত করে, সবাই ইয়ে (সুযোগ নেয়) করে, সে বিষয়গুলো আমরা এরই মধ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম বেড়ে যায়, তখন খুব বেশি তো আর আমাদের করার থাকে না। কিছু তো কমপ্রোমাইজ আমাদের করতে হয়। কিন্তু রোজার সময় যাতে অন্তত দ্রব্যমূল্য (সহনীয়) থাকে।’

ভোজ্যতেলে বাংলাদেশ এখনও ৯০ ভাগই পরনির্ভরশীল বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘খালি ভোজ্যতেলের ব্যাপারে এখনও আমরা ৯০ ভাগই নির্ভরশীল ও পরনির্ভরশীল হয়ে গেছি। সেটাও আমি বলছি, আমাদের অবশ্য রিসার্স ইনস্টিটিউট বারি থেকে কয়েকটা বীজ আবিষ্কার করেছে। খুব ভালো উৎপাদন হবে। ভবিষ্যতে আরও কীভাবে করা যায়। আমার কথা হলো প্রত্যেকটা জিনিস আমরা যেন নিজেরা উৎপাদন করতে পারি, নিজেদের চাহিদা মেটাতে পারি সে একটা অবস্থানে আমাদের থাকবে হবে। কারও মুখাপেক্ষী হয়ে আমাদের যেন থাকতে না হয়। সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছি।’

আগামী কয়েক বছরের মধ্যে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে পেঁয়াজ রপ্তানির আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পেঁয়াজ নিয়ে যে সমস্যা ছিল, আমার মনে হয় পেঁয়াজ আমরা উৎপাদন করতে পারি। আমাদের সেই ব্যবস্থা নিতে পারি। আমাদের বিজ্ঞানীরা, বিশেষ করে কৃষিবিজ্ঞানীরা খুব ভালো কাজ করে। সঙ্গে সঙ্গে রিসার্স করে এখন আমরা বীজ উৎপাদন করতে পারছি। আশা করি, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আর বাইরে থেকে আনতে হবে না। আমরা রফপ্তানি করতে পারব। সেভাবে আমরা কৃষকদের সব রকম সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।’

বিদেশি বিনিয়োগে ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে বাংলাদেশ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘পাশাপাশি অন্য ক্ষেত্রেও কিন্তু বিনিয়োগ ভালো আসছে। আমরা যে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি। ভালো একটা সাড়া আমরা পাচ্ছি। এখন তো অনেকটা কম্পিটিশন এসে গেছে যে বাংলাদেশে কে কে কী কী বিনিয়োগ করবে। সেটার জন্য আমরা আলাদাভাবে রোড শো করা, বিভিন্ন দেশের মানুষকে আকর্ষণ করা, তাদের আহ্বান করা, অর্থাৎ ভবিষ্যৎটা যাতে চলে সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি, যার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নটা এগিয়ে যায়।’

Share.