পুষ্টির ঘাটতি হলে স্বাভাবিকভাবে দেহে বাজে প্রভাব ফেলে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে পুষ্টির ঘাটতি হওয়ার নানা কারণ রয়েছে। তাই কিছু বিষয়ে সাবধান থাকা উচিত। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।
নারীদের সাধারণ কিছু পুষ্টিঘাটতি সম্পর্কে হেল্থলাইন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিস্তারিত জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘অস্টিন পি ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক, পুষ্টিবিদ ডা. ডেবরা রোজ উইলসন। এগুলো হলো:
লৌহের ঘাটতি
নারীদের মাঝে সচরাচর লৌহের ঘাটতি দেখা দেয়। পিরিয়ডের কারণে নারীদের মাঝে এর তীব্রতা আরও বাড়ে। ফলে দেখা দিতে পারে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা। এক্ষেত্রে রক্তের কোষে অক্সিজেন বহনকারী পর্যাপ্ত লোহিত কণিকা থাকে না।
লক্ষণ: লৌহের ঘাটতিতে দেখা দেয় দুর্বলভাব, অবসাদ, শ্বাসের কষ্ট, গলা ব্যথা, নখের ভঙ্গুরতা ইত্যাদি।
উৎস: লৌহের ঘাটতি পূরণে সামদ্রিক খাবার, লাল মাংস, মটর, গাঢ় শাক সবজি, নাশপাতি, সম্পূরক খাবার, শুকনা ফল- কিশমিশ ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি
হাড় ও দাঁতের জন্য ক্যালসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান। এর ঘাটতিতে ‘অস্টিওপোরোসিস’ বা হাড় ভঙ্গুর রোগ ও ‘অস্টিওপেনিয়া’ বা হাড়ের ঘনত্ব হারানোর রোগের সৃষ্টি করে। এই বিষয়ে করা সমীক্ষায় দেখা গেছে, আট থেকে ১৯ বছর বয়সি নারীদের ও বয়স ৫০ পার হওয়ার পরে নারীদের মাঝে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কম থাকে।
লক্ষণ: এতে ক্লান্তি, দুর্বলতা, পেশিতে টান, ত্বকে সমস্যা, দুর্বল হাড়, দাঁতের সমস্যা এবং অস্বাভাবিক হৃদগতির সমস্যা দেখা দেয়।
উৎস: দুধের তৈরি খাবার- দই, দুধ, পনির, সয়া বিন, গাঢ় শাকসবজি, স্যামন ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ সিরিয়াল ইত্যাদি খাবার দেহের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে।
ফোলেটের ঘাটতি
ভিটামিন বি-৯ বা ফলিক অ্যাসিড ফোলেট, যা কোষের লোহিত রক্ত কণিকা গঠন থেকে শুরু করে কোষের সুস্থতার কার্যকারিতায় ও গর্ভবতী নারীদের প্রসবকালীন ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
লক্ষণ: ফোলেটের অভাবে ক্লান্তিভাব, নির্জীবতা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যথা, মলিন ত্বক এবং বুক ধরফর করার সমস্যা দেখা দেয়।
উৎস: গাঢ় সবুজ শাক, মটর, ফল, শস্য, সামদ্রিক খাবার, কলিজা, বাদাম, বীজ ইত্যাদি ফোলেটের ভালো উৎস।
আয়োডিনের ঘাটতি
দেহকে সক্রিয় ও কার্যক্ষম রাখতে কার্যকর আরেকটি খনিজ। এটা থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে সহায়তা করে। বিপাক বাড়ানোর পাশাপাশি দেহের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে।
লক্ষণ: দেহে আয়োডিনের ঘাটতি থায়রয়েডের গ্রন্থি বড় করে। ফলে অনেকের ওজন কমে, দুর্বল লাগে, চুল পড়া, মেজাজের তারতম্য ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয়।
উৎস: দুধের তৈরি খাবার, ডিম, মুরগির মাংস ইত্যাদি আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার।
ভিটামিন ডি
এই উপকারী পুষ্টি উপাদান খাবার ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ সাপেক্ষে সাপ্লিমেন্ট ও সূর্যালোকের মাধ্যমে পাওয়া যায়।
লক্ষণ: ভিটামিন ডি’র অভাবে দুর্বলতা, পিঠে ব্যথা, চুল পড়া, পুরানো ক্ষত বৃদ্ধি ও হতাশার লক্ষণসহ নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা যায়।
উৎস: সূর্যের আলো, ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ, মাছের তেল, ডিমের কুসুম, টিনজাত টুনা, মাশরুম, স্যামন, সার্ডিন ইত্যাদি ভিটামিন ডি’র ভালো উৎস।
ভিটামিন বি-১২
পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন বি-১২ সহজেই দেহে তৈরি হয় এবং খাবার থেকেও গ্রহণ করা যায়। এটা কেবল মস্তিষ্কের উন্নতি ও স্নায়ুবিক কোষের জন্য কাজ করে না বরং ডিএনএ উৎপাদনেও সহায়তা করে।
লক্ষণ: ‘ইউকে ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস’ অনুযায়ী- নির্জীব হলুদ জিহ্বা ও ত্বক, ফোলা ও লালচে জিহ্বা, মুখের আলসার, দৃষ্টি শক্তি হ্রাস, অস্বস্তি, হতাশা ইত্যাদি ভিটামিন বি-১২ স্বল্পতার নানা লক্ষণ।
উৎস: দুধ, ডিম, দই, চর্বিযুক্ত মাছ, লাল মাংস ইত্যাদি থেকে এই ভিটামিন মেলে।