দেশের ১১ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। এসব বিদ্যালয়ে ব্যবহারের উপযোগী নলকূপ বা পানির কোনো উৎস নেই। ব্যবহারের উপযোগী টয়লেট নেই ৯ শতাংশ বিদ্যালয়ে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গত বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে দেশের ৫৪টি জেলার ৫৪ হাজার ৫১১টি বিদ্যালয়ের তথ্য দেয়া হয়েছে। দেশে বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে মোট ৬৫ হাজার ৫৬৬টি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিরাপদ স্যানিটেশন–ব্যবস্থা নিয়ে তথ্য চেয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
গতকাল বৈঠকে মন্ত্রণালয় জানায়, ৫৪টি জেলার ৫৪ হাজার ৫১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। বাকি ১০ জেলার তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি।
মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৪৮ হাজার ৪৭৪টি বা ৮৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্যবহারের উপযোগী নলকূপ বা পানির উৎস রয়েছে। আর ৬ হাজার ৩৭টি বা ১১ দশমিক ০৭ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্যবহারের উপযোগী নলকূপ বা পানির উৎস নেই।
মন্ত্রণালয়ের দেয়া প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশের ৫৪টি জেলার ৪ হাজার ৯৫১টি বা ৯ দশমিক ০৮ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্যবহারের উপযোগী কোনো ওয়াশ ব্লক, টয়লেট নেই। ব্যবহারের উপযোগী ওয়াশ ব্লক রয়েছে ১৯ হাজার ৮১৬টি বা ৩৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ বিদ্যালয়ে। ব্যবহার উপযোগী টয়লেট রয়েছে ৩৯ হাজার ৯৬৮টি বা ৭৩ দশমিক ৭২ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫৪ হাজার ২৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বা হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা আছে। প্রায় ৯৬ শতাংশ বিদ্যালয়ে টয়লেট ওয়াশ ব্লক নিয়মিত হারপিক বা ফিনাইল দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মুহিবুর রহমান বলেন, দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করতে কাজ চলছে। প্রতিবেদনে ১০টি জেলার তথ্য নেই। সেটি যোগ হলে পানি ও স্যানিটেশন–সুবিধা আছে, এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা ও শতকরা হার আরও বাড়বে। আগামী বছরের মধ্যে সব বিদ্যালয়ে সুবিধা নিশ্চিত করা যাবে।
গত জুনে ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতি পাঁচটি বিদ্যালয়ের একটিতে (১৯ শতাংশ) নিরাপদ খাবার পানির অভাব রয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে ৮৫ লাখ শিক্ষার্থীর ওপর। ৪৪ শতাংশ বিদ্যালয়ে পানি ও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার সুবিধাসহ স্বাস্থ্যসেবার অভাব রয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে ১ কোটি ৯০ লাখের বেশি শিক্ষার্থীর ওপর।
ইউনিসেফ ও ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের ৭ শতাংশ স্কুলে কোনো ‘ওয়াশ’ সুবিধা নেই। অর্থাৎ ৩০ লাখের বেশি শিশু এমন স্কুলে যায়, যেখানে নিরাপদ খাবার পানি, স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ও হাত ধোয়ার কোনো জায়গা নেই।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন নিয়ে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে ছিল। কোভিডকালে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় হয়তো কিছু সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১১ শতাংশ বিদ্যালয়ে সুপেয় পানি না থাকা বা ৯ শতাংশ বিদ্যালয়ে ব্যবহারের উপযোগী টয়লেট না থাকা কিছুটা উদ্বেগের। সংখ্যা হিসাবে করলে এটি বেশ বড়। এসব সুবিধা না থাকা শিক্ষার্থীদের, বিশেষত চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যেতে নিরুৎসাহিত করে। তাই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। শিক্ষার মানোন্নয়নের পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন চলা দরকার। ♦
