অস্ট্রেলিয়ার সিডনি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও জগন্নাথ হলের শতবর্ষ পূর্তি উৎসবের প্রস্তুতিতে মুখর। অবিভক্ত বাংলার পূর্ববঙ্গে অবহেলিত ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষার আলো জ্বালাতে আজ থেকে একশো বছর আগে বহু প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তারিখটা ছিল পয়লা জুলাই ১৯২১।
ঠিক একই সময় প্রতিষ্ঠিত হয় জগন্নাথ হল (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রার আগে নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল), ঢাকা হল (বর্তমানে শহীদুল্লাহ হল) ও মুসলিম হল (বর্তমানে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল) এ তিনটি ছাত্রাবাস। চলতি বছর পয়লা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ হল তাদের প্রতিষ্ঠার গৌরবময় শতবর্ষ পূর্ণ করলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ হলের শিক্ষায় ও ঐতিহ্যে সমুজ্জ্বল জগন্নাথ হল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার (জেএইচএএএ) ছাত্র ও তাদের পরিবার মহাসমারোহে পালন করতে যাচ্ছে এ আবেগময় শতবার্ষিকী।
আগামী ১৯ ডিসেম্বর সিডনির পশ্চিমে ব্ল্যাকটাউনের কাউন্সিল হলে তারা শতবর্ণে, প্রাণের শতধারায় উদযাপন করবে ‘গৌরবের একশো বছর’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ হলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা কথা বলেছেন সিডনিতে আসন্ন এ উৎসব সম্পর্কে। জগন্নাথ হলের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও এ উৎসবের আহবায়ক অমল দত্ত বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে উদ্দেশ্য নিয়ে পথচলা শুরু করেছিল, তার সহযাত্রী হয়ে জগন্নাথ হলও এ লক্ষ্য ও আদর্শে অবিচল ও সমুজ্জ্বল থেকেছে একশোটি বছর। শিক্ষায়-নেতৃত্বে সমৃদ্ধ করেছে জাতিকে। তাই এ শতবর্ষপূর্তি উৎসব আমাদের জন্য খুবই গুরুত্ববহ। এটা একটা বিরল সুযোগ। অত্যন্ত গৌরবের ও আবেগের।
কবি, সংগঠক ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের নেতা তুষার রায় বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু এর শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় নয় বরং গোটা জাতির। শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববীক্ষণের যোগ্য সামর্থ্য সৃষ্টি করে এ প্রতিষ্ঠান। সবক্ষেত্রে মেধার স্ফূরণ ঘটিয়ে একটি জাতির গঠন ও ক্রমবিকাশ ঘটিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
তিনি আরও বলেন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং সকল গণতান্ত্রিক ও মুক্তবুদ্ধির আন্দোলনের সূতিকাগার এ বিদ্যাপীঠ। আত্মত্যাগেও হয়েছে অগ্রণী। জগন্নাথ হল এতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। তাই এ শতবর্ষপূর্তি উৎসব আমাদের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ।
এ বর্ণিল অনুষ্ঠানকে ঋদ্ধ, স্মরণীয় ও উপভোগ্য করে তুলতে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। অস্ট্রেলিয়ার সব প্রদেশে অবস্থানরত জগন্নাথ হলের প্রাক্তন ছাত্ররা সপরিবারে যুক্ত হবেন এ উৎসবে।
অনুষ্ঠানমালায় থাকবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ হলের প্রতিষ্ঠার ইতিহাস; দেশ ও সমাজ গঠনে এ দুই আলোকিত প্রতিষ্ঠানের অবদান এবং ইতিহাসে যে বিদ্বান-গুণী-মনীষীরা এই দুই প্রতিষ্ঠানকে উজ্জ্বল করে গেছেন, তাদের পরিচয় ও ইতিহাস উপস্থাপন করে শ্রদ্ধা জানানো। থাকছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
এসব ইতিহাস, ঐতিহ্য ও স্মৃতি চয়ন করে এবং বাংলাদেশের সমাজ ও অর্থনীতি নিয়ে এ উৎসবে প্রকাশিতব্য ম্যাগাজিন ‘গৌরবের একশো বছর’-এ লিখেছেন বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত স্বনামধন্য কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, প্রশাসক, গবেষক, সাংবাদিক, অর্থনীতিবিদ এবং জগন্নাথ হলের প্রাক্তন ছাত্র ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের শুভেচ্ছা বার্তাও থাকবে এতে। ♦