গতকাল তিন উইকেট নিয়ে জয়ের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। আজ রোববার হারারে টেস্টের শেষ দিনের তৃতীয় সেশনের মধ্যেই মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাসকিন আহমেদের দৃঢ়তায় বাকি উইকেটগুলো তুলে নেয় টাইগাররা। সঙ্গে সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর বিদায়ী টেস্ট জয়ে রাঙাল সফরকারীরা।
আর জিম্বাবুয়ের মাটিতে প্রথমবার সিরিজ জয়ের রেকর্ড গড়ল মুমিনুল হকের দল।
হারারে টেস্টে বাংলাদেশ জিতেছে বাংলাদেশ জিতেছে ২২০ রানে।
৪৭৭ রানের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে পঞ্চম দিন জিম্বাবুয়ে অলআউট হয় ২৫৬ রানে।
সফরকারীদের হয়ে ৮২ রানে ৪ উইকেট নেন তাসকিন। এদিকে ৬৬ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এ অলরাউন্ডার দুই ইনিংস মিলিয়েছেন নিয়েছেন ১৪৮ রানে ৯ উইকেট, দেশের বাইরে বাংলাদেশের সেরা বোলিং কীর্তি।
রোববার শুরুতে দুই প্রান্ত দিয়ে স্পিন আক্রমণ করে বাংলাদেশ। কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছিলো না।
শেষ পর্যন্ত তবে প্রথম ব্রেকথ্রু সফরকারীরা পায় ১৯তম ওভারে।
শর্ট মিডউইকেটে মিরাজের বলে সাদমান ইসলামের হাতে ক্যাচ দেন মায়ার্স, ২৬ রান করে ফেরেন তিনি।
দুই বল পর টিমাইসেন মারুমা হন মিরাজের বলে এলবিডব্ল“। এর মাঝে দুবার বেঁচেছেন ডিওন মায়ার্স, একবার ডোনাল্ড তিরিপানো।
সাকিবের বলে উইকেটের পেছনে মায়ার্সের (২২ রানে) ক্যাচ ছেড়েছেন লিটন দাস।
মায়ার্সের ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি তাসকিন। তবে ঠিকই দ্রুত সময়ের মধ্যে টাইগারদের উইকেট এনে দেন মিরাজ।
জিম্বাবুয়ের পরের দুই উইকেট নেন তাসকিন আহমেদ। আগুনে স্পেলে রয় কাইয়া ও রেজিস চাকাভাকে ফিরিয়ে দেন এই পেসার। কাইয়াকে এলবিডব্ল“র ফাঁদে ফেলেন তাসকিন।
আর চাকাভাকে এ পেসার ফেরান বোল্ড করে। তাইতো মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ৭ উইকেট ১৭৬ রান তুলে জিম্বাবুয়ে। সে সময় একপ্রান্তে টিকে ছিলেন ডোনাল্ড তিরিপানো।
বিরতির পর সেই নিয়াউচিকে নিয়ে কিছুক্ষণ বাংলাদেশকে আটকে রেখেছিলেন তিরিপানো। তবে এ জুটির প্রতিরোধ ভাঙেন সেই তাসকিন। এবার তিনি নিয়াউচিকে দ্বিতীয় স্লিপে সাকিবের ক্যাচে ফেরান।
তাসকিনের ক্যারিয়ার–সেরা বোলিং এটি, এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ইনিংসে ৪ উইকেট পেলেন।
সুযোগ পাওয়া তিরিপানো খেলছিলেন দারুণ। এক পর্যায়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন তিনি। অবশেষে তাকে ফেরান ইবাদত হোসেন।
ফেরার আগে তিরিপানো করেন ১৪৪ বলে ৫২ রান।
তিরিপানোর বিদায়ের পর বাংলাদেশ অপেক্ষায় রাখেন ব্লেসিং মুজারাবানি ও রিচার্ড এনগারাভার জুটি। শেষ পর্যন্ত তাদের প্রতিরোধ ভাঙেন মিরাজ। তার বলে স্লগ করতে গিয়ে বোল্ড হন এনগারাভা।
সঙ্গে সঙ্গে জিম্বাবুয়ের মাটিতে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৪৬৮/১০, ১২৬ ওভার (মাহমুদউল্লাহ ১৫০*, লিটন ৯৫, তাসকিন ৭৫; মুজারাবানি ৪/৯৪)
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস : ২৭৬/১০, ১১১.৫ ওভার (কাইতানো ৮৭, টেইলর ৮১, শুম্বা ৪১; মিরাজ ৫/৮২)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : ২৮৪/১ (ডিক্লেয়ার), ৬৭.৪ ওভার (শান্ত ১১৭*, সাদমান ১১৫*, সাইফ ৪৩; এনগারাভা ১/৩৬)
জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস : ২৫৬/১০, ৯৪.৩ ওভার (টেলর ৯২, তিরিপানো ৫২, মুজারাবানি ৩০*; মিরাজ ৪/৬৬, তাসকিন ৪/৮২)
ফল: বাংলাদেশ ২২০ রানে জয়ী।
সিরিজ: এক ম্যাচের সিরিজ ১-০ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ।
ম্যাচসেরা: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
এদিকে কয়েকদিন ধরে চলতে থাকা গুঞ্জন অবশেষে গতকাল আজ সকালে সত্যি হল।
আজ হারারে টেস্টের শুরুর আগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে গার্ড অব অনার দেন সতীর্থরা। তখনই তার টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ব্যাপারটি নিশ্চিত হয়ে যায়।
টেলিভিশন সম্প্রচারেও মাহমুদউল্লাহর অবসরের কথা নিশ্চিত করেছেন ধারাভাষ্যকাররা।
এর আগে হারারে টেস্টের তৃতীয় দিনের সকালে নাকি সতীর্থদের মাহমুদউল্লাহ জানিয়ে দিয়েছিলেন টেস্ট থেকে অবসরের কথা।
যদিও তিনি সংবাদমাধ্যমে ব্যাপারটি নিয়ে কোন কথায় বলেননি। এ কারণে তার অবসর নিয়ে ধম্রজাল তৈরি হয়।
তবে গতকাল সব পরিস্কার হয়ে যায় তাকে জানানো সতীর্থদের গার্ড অব অনারের মধ্যে দিয়ে।
এর আগে ১৬ মাস পর আচমকায় মাহমুদউল্লাহ ফিরেছিলেন টেস্টে।
আট নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে একাদশে ঠাঁই পেয়ে ক্যারিয়ারসেরা ১৫০ রানের ইনিংস খেলেন। ব্যাটিংয়ে রাঙানো ম্যাচটাকে বানান বিদায়ের মঞ্চ।
মাহমুদউল্লাহর টেস্ট অভিষেক অবশ্য হয়েছিল ২০০৯ সালে কিংসটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
২০০৭ সালে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অভিষেক হলেও টেস্ট দলে জায়গা পেতে দুই বছর অপেক্ষা করতে হয় তাকে।
১২ বছরে দেশের হয়ে ৫০টি টেস্ট খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। ৫টি সেঞ্চুরি ও ১৬টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৩.৪৯ গড়ে তার রান ২ হাজার ৯১৪।
বল হাতেও অবদান রয়েছে মাহমুদউল্লাহর। সাদা পোশাকে ৪৩টি উইকেট নিয়েছেন তিনি।
টেস্টে মাহমুদউল্লাহর সেরা বোলিং ৫১ রানে ৫ উইকেট, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ♦