বিশ্বে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ভাইরাসটির উৎসস্থল হিসেবে তকমা পেয়ে আসছে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর। তবে এই তকমা গায়ে লাগাতে রাজি নয় চীনা সরকার।
যদিও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত নয়, করোনা কোথা থেকে সংক্রমণ শুরু হয়েছে। আর তাই, করোনার উৎস কোথায়, তা জানতে এবার উহান শহরে তদন্ত চালাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, ১০ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ নিয়ে গঠিত তদন্ত দলটি আগামী জানুয়ারিতে চীনে যাবে।
ওই বিশেষজ্ঞ দলের এক সদস্য সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানিয়েছে, উৎস নিয়ে কাউকে দোষ দিতে চাচ্ছে না ডব্লিউএইচও, বরং ভবিষ্যতে করোনার সংক্রমণ মোকাবিলা করতে চাচ্ছে।
তদন্তদলের সদস্য জার্মানির রবার্ট কোচ ইনস্টিটিউটের ফ্যাবিয়ান লিন্ডার্টজ বলেছেন, করোনার উৎসের জন্য কোন দেশ দায়ী, তা খুঁজতে এই তদন্ত করা হচ্ছে না। মূলত কী ঘটেছিল, তা জানার পর পাওয়া তথ্য-উপাত্ত নিয়ে ভবিষ্যতে আমরা ঝুঁকি কমাতে পারি।
চার থেকে পাঁচ সপ্তাহ ধরে এই তদন্তের কাজ চলতে পারে বলে জানিয়েছেন ফ্যাবিয়ান।
তদন্ত চালাতে বেশ আগে থেকেই অনুমতি চেয়ে এসেছে ডব্লিউএইচও। তবে এতদিন গড়িমসি করার পর এবার মধ্যস্থতায় পৌঁছাল বেইজিং।
শুরু থেকেই অনেকে ধারণা করছে, উহান শহরের একটি পশু বিক্রির বাজার থেকে করোনা ছড়িয়েছে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে কয়েকবার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অভিযোগ করেছিল, করোনার উৎস সম্পর্কে তথ্য গোপন করছে চীন। উহানের একটি জৈব পরীক্ষাগার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করে। চীন সে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। এ ছাড়া উহানের একটি বাজারে প্যাঙ্গোলিন বা বাদুড় থেকে ভাইরাসটি ছড়ানোর অভিযোগও অস্বীকার করেছে দেশটি।
চীন নতুন দাবি নিয়ে হাজির হয়েছে। তারা বলছে, গত বছর বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ভাইরাসটি ছড়িয়েছিল। তারাই প্রথম এ সম্পর্কে সবাইকে জানিয়েছে ও এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘করোনাভাইরাস নতুন ধরনের ভাইরাস। এর তথ্য জানার পর থেকেই আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আমরা সবাই জানি, গত বছরের শেষ দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মহামারিটি শুরু হয়। চীন প্রথম এ সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই ভাইরাসটি শনাক্ত করে বিশ্বের সবার কাছে জিনোম সিকোয়েন্স জানানো হয়।’
‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে চীনে করোনার উৎস খুঁজতে যে বিশেষজ্ঞ দল পাঠানো হবে, তার তালিকা দেওয়া হয়েছে।
গত মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিদ্ধান্ত নির্ধারণে যুক্ত ওয়ার্ল্ড হেলথ অ্যাসেম্বলির এক বার্ষিক সভায় করোনাভাইরাসের উৎস খোঁজার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চীনও প্রস্তাবটিকে সমর্থন করেছিল।
উহানের পুনর্জন্ম
উহান নগর করোনাভাইরাস মহামারির গ্রাউন্ড জিরো হিসেবে পরিচিত। বিশ্ব মহামারির প্রতীকে পরিণত হয়েছিল উহান। দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ ছিল শহরটি।
প্রায় এক কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার শহরে এখন স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। শুধু তা-ই নয়, যেখান থেকে মহামারি শুরু হয়েছিল সেখানে এখন ভিড় করছে সবচেয়ে বেশি পর্যটক।
প্রদেশের সংস্কৃতি ও পর্যটন দপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চীনে সবচেয়ে বেশি ভ্রমণ করা শহরের শীর্ষে রয়েছে উহান।
উহান যেন এই করোনাভাইরাস এখন অনেক অনেক দূরের স্মৃতিতে পরিণত হয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই উহানকে বর্ণনা করেছিলেন এক বীর নগরী হিসেবে।
সরকার বলছে উহানে করোনাভাইরাসের একটি সংক্রমণও নেই।
পররাষ্ট্র দপ্তরের তথ্য বিভাগের উপ-পরিচালক হুয়া চুনইং বলেন, করোনাভাইরাসের পর যেন আরো বেশি প্রাণশক্তি নিয়ে উহানের পুনর্জন্ম হয়েছে।
এ বিষয়ে দ্বিমত ও সংশয় প্রকাশ করেছে পশ্চিমা গণমাধ্যম। তারা বলছে, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের সহায়তায় চীন সরকার উহানের এমন একটি চিত্র তুলে ধরতে চাইছে যাতে মনে হয় সেখানের সবকিছু স্বাভাবিক। কিন্তু পরিস্থিতি ভিন্ন। চীনা প্রচারণা থেকে এমন বার্তা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে যে, চীন সরকার করোনাভাইরাস খুব সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। ♦