মহাকাশে নতুন অভিযানের জন্য ১০ ট্রেইনি নভোচারী নিয়োগ দিয়েছে নাসা। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাইক্লিস্ট, চিকিৎসক ও পাইলটসহ অন্য পেশার সাতজন।
১২ হাজার আবেদনকারীর মধ্য থেকে গতকাল ১০ ট্রেইনি নভোচারীর নাম ঘোষণা করে নাসা।
জানুয়ারি থেকে তাদের টেক্সাসের জনসন স্পেস সেন্টারে যোগ দিতে বলা হয়েছে। সেখানে তাদের দুই বছরের ট্রেনিং দেয়া হবে।
নিয়োগপ্রাপ্তদের স্বাগত জানানোর অনুষ্ঠানে নাসার প্রশাসক বিল নেলসন বলেন, ‘আমরা আবার চাঁদে যাচ্ছি। আমরা মঙ্গলে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। আমরা নতুন ১০ অভিযাত্রীকে স্বাগত জানাই।’
নিয়োগপ্রাপ্ত ১০ জনের বয়স ৩২ থেকে ৪৫ বছরের এর মধ্যে। তাদের এখন কঠিন ট্রেনিংয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে কীভাবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়, মহাশূন্যে কীভাবে হাঁটতে হয়, রোবোটিক বিষয়াদি শেখানো হবে তাদের। এছাড়া ট্রেনিং জেট টি-৩৮ চালানোর পাশাপাশি শেখানো হবে রুশ ভাষা, যাতে প্রতিপক্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।
ট্রেনিংয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তাদের পাঠানো হতে পারে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের বিভিন্ন অভিযানে বা মহাকাশের গভীর কোনো অভিযানে। এসব অভিযানের মধ্যে রয়েছে চলতি দশকের শেষ দিকে চন্দ্রাভিযান। এ অভিযানের নাম আর্টিমিস মিশন। এ মিশনের মধ্য দিয়ে চাঁদে প্রথম কোনো নারী ও সাদা চামড়ার বাইরে কারোর পদচিহ্ন ফেলানোর চেষ্টা করছে নাসা।
এই প্রথম আবেদনের মাধ্যমে নভোচারী নিয়োগ দিল নাসা। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে যাদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও গণিতের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি রয়েছে, মূলত তাদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করা হয়েছিল। মেডিক্যাল ডিগ্রি রয়েছে বা যারা পাইলট টেস্ট সম্পন্ন করেছেন, তারাও আবেদন করতে পেরেছিলেন।
নিয়োগপ্রাপ্তদের একজন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জেসিকা উইটার। তিনি বলেন, ‘আমি খুব ছোট থেকেই নভোচারী হতে আগ্রহী ছিলাম। আমি যখন ছোট্ট বালিকা ছিলাম, তখনই স্কুলের পার্কে রকেট নিয়ে খেলা করতাম। বিজ্ঞানের ক্লাস আমার খুব ভালো লাগত।’
নিয়োগ পাওয়া আরেকজন হলেন যুদ্ধবিমানের পাইলট নিকোল আয়ারস। দুইশর বেশি ঘণ্টা যুদ্ধবিমান পরিচালনায় অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। যে কয়েকজন নারীর সর্বাধুনিক এফ-২২ ফাইটার জেট পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদের মধ্যে আয়ারস একজন।
২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো নারীদের মাধ্যমে পরিচালিত একটি এয়ারক্রাফটের নেতৃত্ব দেন আয়ারস।
ট্রেইনি নভোচারী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল ফিজিকসের সহযোগী অধ্যাপক ৩৮ বছর বয়সী ক্রিস্টোফার উইলিয়ামস। তিনি ক্যানসারে রেডিয়েশন থেরাপি নিয়ে গবেষণা করছেন।
নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে নাসার সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে ৪৫ বছর বয়সী অনিল মেননের। যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর এ কর্নেল এর আগে নাসার স্পেসএক্সের প্রথম ফ্লাইট সার্জন হিসেবে কাজ করেছেন।
চিকিৎসক অনিল যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও তার মা-বাবা ভারত ও ইউক্রেনের। ২০১০ সালে হাইতি ভূমিকম্প, ২০১৫ সালে নেপালে ভূমিকম্প ও ২০১১ সালে রেনো এয়ার শো দুর্ঘটনার পর কাজ করেছেন তিনি।
১০ জনের দলে ডাক পাওয়া ক্রিস্টিনা বির্চের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) থেকে একাধিক ডিগ্রিধারী। গণিত, বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকিউলার বায়োফিজিকসে ডিগ্রির পাশাপাশি বায়োলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডক্টরেট করেছেন তিনি। তবে এসবে ক্যারিয়ার গড়েননি ক্রিস্টিনা। নিজেকে গড়ে তোলেন একজন সাইক্লিস্ট হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্র্যাক সাইক্লিস্ট দলের পরিচিত মুখ ছিলেন ক্রিস্টিনা। খেলেছেন অলিম্পিকে। জিতেছেন বিশ্বকাপ মেডেল।
নভোচারী গড়া নিয়ে নাসার শেষ কোর্স সম্পন্ন হয় ২০১৭ সালে। ওই ব্যাচের দুজন রাজা চারি ও কায়লা ব্যারন বর্তমানে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে রয়েছেন। ♦