জাতীয় চিত্রশালায় চলছে ‘করোনার বিরুদ্ধে শিল্প’ প্রদর্শনী

0

বাবা আক্রান্ত হয়েছেন কোভিডে। এ কারণে অসুস্থ বাবার কাছে যেতে পারছে না সন্তান। দুইজন দুই পাশে, মাঝখানে অদেখা কাচের দেয়াল। মর্মস্পর্শী এ দৃশ্য ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী জামাল আহমেদ। অন্যদিকে করোনার ভয়াবহতার মাঝে মানুষকে ভালোবাসার চিত্রটি শিল্পকর্মে ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। এ ধরণের ৩২৫ শিল্পকর্ম নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী প্রদর্শনী চলছে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালায়।

চলতি বছরের মার্চ থেকে বাংলাদেশে চলছে করোনাভাইরাসের তান্ডব। কোনো পরিবারের কেউ আক্রান্ত হলে পুরো পরিবারটিকে প্রায় একঘরে করে রাখা হতো শুরুর দিকে। নিরাপত্তার জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে তৈরি হয়েছিল এক অন্য রকম বিচ্ছিন্নতা। মা–বাবা আক্রান্ত হলে সন্তান, কিংবা সন্তান আক্রান্ত হলে মা–বাবা তার কাছে গিয়ে শুশ্রূষার হাত রাখতে পারেন না গায়ে, মাথায়।

এখন করোনার প্রাথমিক পর্বের সেই ভয়-আতঙ্ক অনেকটা কমলেও রোগের সংক্রমণ পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। চিকিৎসক, নার্স, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ, সমাজের সব স্তরের মানুষের সম্মিলিত লড়াই চলছে করোনা মোকাবিলার জন্য। আর এতে সামিল হলেন দেশের চারুশিল্পীরা।

‘করোনার বিরুদ্ধে শিল্প’ নামের এ প্রদর্শনীর কর্মগুলো শিল্পীরা করেছেন করোনা পরিস্থিতিতে। এ দুঃসময়ে শিল্পীদের আর্থিক সহায়তা ও তাঁদের অনুপ্রেরণা দিতে এ প্রদর্শনীর পরিকল্পনা করা হয়েছে। ৭ থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত একটি আর্ট ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। শিল্পী জামাল আহমেদ ছিলেন এর সমন্বয়ক। সমরজিৎ রায়চৌধুরী, হাশেম খান, মনিরুল ইসলাম, হামিদুজ্জামান খান, সৈয়দ আবুল বারক আলভী, আবদুস শাকুর শাহসহ দেশের বরেণ্য প্রবীণ শিল্পী ও নবীন ৩২৫ জন শিল্পী এতে অংশ নেন। তাঁদের অনেকে জাতীয় চিত্রশালায় এসে ছবি এঁকেছেন, আবার কেউ বাড়িতে কাজ করেছেন।

এ অভাবনীয় মহামারি সমাজ ও জীবনে যে প্রভাব-প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে, শিল্পীরা তা তুলে ধরেছেন তাঁদের কাজে। সেদিক থেকে এ কাজগুলোর শৈল্পিক মূল্যের পাশাপাশি স্বতন্ত্র ঐতিহাসিক তাৎপর্যও রয়েছে। করোনার অভিঘাত শৈল্পিক চেতনায় কেমন করে উদ্ভাসিত হয়েছে, তার প্রামাণ্য নজির হয়ে থাকবে প্রদর্শনীটি।

প্রসঙ্গত প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব বদরুল আরেফিন, শিল্পী অধ্যাপক জামাল আহমেদ, সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

‘করোনার বিরুদ্ধে শিল্প’ প্রদর্শনী চলবে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত।

Share.