কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা কিনতে বাংলাদেশকে ২০ কোটি ইউরো ঋণ দিচ্ছে ফ্রান্স সরকারের অর্থায়নকারী সংস্থা এজেন্সি ফ্রান্সেস ডেভেলপমেন্ট (এএফডি)। বর্তমান বাজারদরে বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ইউরো ১০০ টাকা) এ অর্থের পরিমাণ ২ হাজার কোটি টাকা।
গত বছর নভেম্বরে টিকার জন্য ফ্রান্সের কাছে বাংলাদেশ ২৫ কোটি ডলারের (২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা) যে ঋণ সহায়তা চেয়েছিল, সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে এ ঋণ দিচ্ছে এএফডি।
এ ঋণের সুদহার দেড় শতাংশের বেশি নয়।
আগামী অক্টোবরে সংস্থাটির বোর্ড সভায় এ ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন হবে। চলতি বছর এ অর্থ বাংলাদেশ পাবে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কোভিড-১৯ মহামারি থেকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরতে দেশের বেশিরভাগ মানুষকে টিকা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ জন্য প্রায় ২৮ কোটি টিকার প্রয়োজন পড়বে। খরচ হবে বিপুল পরিমাণ অর্থ।
সে অর্থের জন্য সরকার গত বছর নভেম্বরে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার কাছে ২৫০ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে চিঠি দেয়। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছে ৫০ কোটি ডলার, এডিবির কাছে ৫০ কোটি ডলার, জাইকার কাছে ৫০ কোটি ডলার, এআইআইবির কাছে ৫০ কোটি ডলার, জার্মানির কাছে ২৫ কোটি এবং ফ্রান্সের কাছে ২৫ কোটি ডলার ঋণ চেয়ে আলাদা চিঠি পাঠিয়েছিল ইআরডি।
ইআরডি কর্মকর্তারা জানান, গত বছর অন্যান্য উন্নয়ন সংস্থার মতো এএফডির কাছে টিকার জন্য ঋণ সহায়তা চেয়ে যে চিঠি দেয়া হয়েছিল, প্রায় ১০ মাস পর সংস্থাটি সে বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। এএফডির ঢাকা অফিস থেকে এরই মধ্যে ঋণ প্রস্তাব ইআরডির ইউরো উইং প্রধানের কাছে পাঠানো হয়েছে।
ইআরডির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ফ্রান্সের প্রস্তাব এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এএফডি বা কোনো সংস্থা থেকে ঋণ প্রস্তাব পাওয়া মানেই কিন্তু বাংলাদেশের ঋণ পাওয়া নয়। এখানে তারা অনেক শর্ত দেয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ ভেবে দেখবে, কোনটি আমরা মানতে পারব, কোনটি সম্ভব নয়।
তবে এ ঋণের সুদের হার অনেক কম হবে। ঋণ নিতে সম্মত হলে সুদের হার সর্বোচ্চ দেড় শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে, বলেন ওই কর্মকর্তা।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় ‘হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল প্রোটেকশন সাপোর্ট প্রোগ্রাম’-এর আওতায় এ ঋণ দেয়া হবে। আগামী অক্টোবরে বোর্ড সভায় ঋণ দেয়া ও ঋণের পরিমাণ চূড়ান্ত হবে।
সংস্থাটি আশা করছে, বোর্ড সভায় অনুমোদনের পরপরই এ বিষয়ে ঋণচুক্তি করা যাবে এবং এ বছরের মধ্যেই অর্থছাড়ও শুরু করা যাবে। তবে এ ঋণচুক্তির জন্য আগামী বছরের (২০২২) নভেম্বর পর্যন্ত সময় পাবে বাংলাদেশ। শর্ত হিসেবে আগামী বছরের মধ্যেই মেয়ে, নারী ও ট্রান্সজেন্ডারদের টিকা দেয়ার একটি কৌশলপত্র করতে বলেছে এএফডি।
আগামী দুই বছরের মধ্যে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ বা ১৩ কোটি ৮২ লাখ মানুষকে ২ ডোজ করে করোনা প্রতিরোধী টিকা দেবে সরকার। এতে মোট ব্যয় হবে ৩৭০ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী, এর পরিমাণ ৩১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।
এ অর্থের বড় অংশই আসছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর নমনীয় ঋণ থেকে।
ইআরডি সূত্র জানিয়েছে, টিকা কিনতে বাংলাদেশকে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থা ঋণ দিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে ম্যানিলাভিত্তিক বহুজাতিক ঋণদানকারী সংস্থা এডিবির কাছ থেকে। সংস্থাটি দেবে সর্বোচ্চ ৯৪ কোটি ডলার।
অপর উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংক দেবে ৫৫ কোটি ডলার। এ ছাড়া চীনের নেতৃতাধীন এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাংক বা এআইআইবি অর্থায়ন করছে ৫০ কোটি ডলার।
জাপানের জাইকা দিচ্ছে ৩৫ কোটি ডলার।
এর বাইরে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীরা দিচ্ছে ৬১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে টিকা কিনতে উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ২৯৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ♦