কয়েক মাস ধরে বিজ্ঞানীরা বলছেন, বদ্ধ ঘরের বাতাসে টিকে থাকে এ ভাইরাস, আশপাশে যাকে পায়, সংক্রমিত করে। ভাইরাসটি যদি সত্যিই বাতাসে বাহিত হয়ে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ছড়াতে পারে, বিশেষ করে সেসব জায়গায়, যেখানে অবাধে বাতাস চলাচল নেই, কিন্তু মানুষের সমাগম বেশি, তাহলে ভাইরাস ঠেকানোর পরিকল্পনাতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে।
এক্ষেত্রে মাস্ক পরতে হবে ঘরের মধ্যেও। সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মানার পরও আবদ্ধ জায়গায় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দিতে যাওয়ার আগে স্বাস্থ্যকর্মীদের এন ৯৫ মাস্ক পরে নিতে হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, নার্সিং হোম, বাসাবাড়ি আর অফিসে এয়ার কন্ডিশনার বা এয়ার কুলারের ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে, বসাতে হবে বাতাস বিশুদ্ধ করার শক্তিশালী ফিল্টার। এমনকি ঘরের ভেতরে বাতাসে ভেসে বেড়ানো ভাইরাসবাহী অতিক্ষদ্র কণাগুলো ধ্বংস করতে অতিবেগুণি রশ্মিও ব্যবহার করতে হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বরাবরই বলে আসছে, আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি কাশির সময় শ্বাসতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসা ভাইরাল জলকণা থেকেই মূলত এ ভাইরাস ছড়াচ্ছে। তবে অপেক্ষাকৃত বড় কণাগুলো ভারী হওয়ায় দ্রুত নিচে পড়ে যায়।
তবে ৩২টি দেশের ২৩৯ বিজ্ঞানী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে লেখা এক খোলা চিঠিতে প্রমাণসহ দেখিয়েছেন, বাতাসে ভেসে থাকা একেবারে ক্ষুদ্র ভাইরাসবাহী কণা থেকেও মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। চিঠিটি শিগগির কোনো একটি সায়েন্টিফিক জার্নালে প্রকাশ করার কথাও ভাবছেন গবেষকরা।
নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে তাদের তথ্য-পরামর্শে হালনাগাদ করার সুপারিশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
২৯ জুন প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যেও বলা হয়েছে, কেবল তখনই এ ভাইরাস বাতাস বাহিত হয়ে সংক্রমণ ঘটাতে পারে যদি ভাইরাল জলকণা বা ড্রপলেটের আকার ৫ মাইক্রনের চেয়ে ছোট হয় (১ মাইক্রন = ১ মিটারের ১ মিলিয়নতম ভাগ)। আর কেবল তখনই আবদ্ধ পরিবেশে বায়ু চলাচলের সুবিধা বা এন ৯৫ মাস্ক পরার কথা ভাবা উচিৎ বলে মনে করে সংস্থাটি।
মহামারীর শুরু থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তাদের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ নির্দেশনায় প্রাথমিক সুরক্ষাবিধি হিসেবে ঘন ঘন হাত ধোয়ার কথা জোরেশোরে বলে আসছে। অথচ কোনো বস্তুর উপরিতল থেকে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটার প্রমাণ খুব বেশি নেই। (যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এখন বলছে, কোনো কিছুর উপরিতল ভাইরাস ছড়াতে সামান্য ভূমিকা রাখে।)
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের বেনেদেত্তা আলেগ্রানজির দাবি, ভাইরাস যে বায়ূবাহিত হয়ে ছড়াচ্ছে, তার গ্রহণযোগ্য প্রমাণ নেই। ♦