কোভিড-১৯ মহামারির প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে জনস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধির ওপর। একইভাবে প্রভাবিত করেছে তা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও কর্মসংস্থানকে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) তৃতীয় লক্ষ বাস্তবায়নে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ লক্ষ অর্জনে মাতৃমৃত্যু হ্রাসসহ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর জন্য প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে মৃত্যু কমাতে কাজ করছে ‘মা টেলিহেলথ’।
একইসঙ্গে সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে অ-সংক্রামক রোগ থেকেও মৃত্যুহার হ্রাস নিশ্চিত করণ ও মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে ভূমিকা রাখছে এ টেলিহেলথ সেন্টারটি।
করোনাকালে নিরবচ্ছিন্ন মাতৃসেবা দিয়ে গর্ভবতী ও মাতৃদুদগ্ধদানকারী মায়ের পাশাপাশি শিশুদের সেবা দিচ্ছে মা টেলিহেলথ। মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে, তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ ও এটুআইয়ের তত্ত্বাবধানে সেবা দিচ্ছে মা টেলিহেলথ সেন্টার। এতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে বেসিস, সিনেসিস আইটি ও স্বাস্থ্য বাতায়ন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় ১০ লাখ মায়ের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষে সেন্টারটি গত বছরের ১৪ জুন চালু হয়। বর্তমানে পাইলট প্রকল্প হিসাবে ১৩ উপজেলায় সেবা দিচ্ছে। দেশে প্রথমবারের মতো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সমন্বয়ে গঠিত একটি মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টীম সরাসরি গর্ভবতী নারী, দুগ্ধদানকারী মা ও শিশুদের পরিষেবা দিচ্ছে, যা সরকারের স্বাস্থ্যসেবার পরিপূরক।
গর্ভবতী মা, দুগ্ধবতী মা ও অনূর্ধ্ব দুই বছর বয়সী শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শ, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাব্যবস্থা ও হেলথ সেন্টারের সঙ্গে সমন্বয় করে সেন্টারটি সেবা দিচ্ছে। এ জন্য স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ, পুষ্টিবিদ, কাউন্সেলর ও স্থানীয় সরকারের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত টিম কাজ করছে।
বেসরকারী খাতের সঙ্গে কার্যকর রেফারাল সিস্টেমসহ শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য টেলিহেলথ সেবা নম্বার ৩৩৩ ও স্বাস্থ্য বাতায়ান (১৬২৬৩) সার্বক্ষনিক সেবা দিচ্ছে।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, মা টেলিহেলথ সেন্টার ১৪ জুন থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ৭৯ হাজার ৪৪২ জনকে সেবা দিয়েছে। তাদের মধ্যে ৮ হাজার ৮১৭ জনকে স্ত্রীরোগবিদ্যা বিশেষজ্ঞসেবা, ১২ হাজার ৪৪৬ জনকে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞসেবা, দুই হাজার ১৪২ জনকে সাধারন চিকিৎসা সেবা, ৯৪১ জনকে মনরোগের চিকিৎসাসেবা, দুই হাজার ২৩০ জনকে পুষ্টিসেবা, ২৯৪ জন করোনা রোগীকে চিকিৎসাসেবা ও ৩৬১ জন করোনা রোগীর ফলো-আপ নেওয়া হয়েছে।
এটুআইয়ের চীফ ই-গভর্ন্যান্স স্ট্র্যাটেজিস্ট, লিড ফোকাল ডিজিটাল সার্ভিস এক্সিলারেটর, ফরহাদ জাহিদ শেখ বলেন, ‘এসডিজির তৃতীয় লক্ষমাত্রা অর্জনে কাজ করছে মা-টেলিহেলথ সেন্টার। এর মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করা ও মাতৃমৃত্যু হ্রাস করতে এটি কার্যকরী ভুমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি। এ ছাড়া করনাকালে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবাদানের লক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, ডিজিএইচএস, এটুআই ও সিনেসিস আইটি একসঙ্গে মা-টেলিহেলথ নিয়ে কাজ করছে।’
মা-টেলিহেলথ সেন্টারের মাধ্যমে বাংলাদেশে গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের কার্যকর এএনসি, পিএনসি ও জরুরী সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন সিনেসিস আইটির সিইও ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডাঃ নিজামউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মা-টেলিহেলথ সেন্টারের মাধ্যমে গর্ভবতী মা, দুগ্ধবতী মা ও দুই বছর বয়সী শিশুদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও পরামর্শ, প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং হেলথ সেন্টারের সঙ্গে সমন্বয় করে এটি সেবা দেয়। এ লক্ষে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ, পুষ্টিবিদ, কাউন্সেলর ও স্থানীয় সরকারের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত টিম কাজ করছে। প্রতিদিন দুইটি শিফটে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এ সেবা দেওয়া হচ্ছে। দুই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ, দুই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, একজন সাধারন চিকিৎসক ও একজন মনরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন এখানে। এ ছাড়া একজন পুষ্টিবিদ ও ৮ হেলথ ইনফরমেশন অফিসার মা-টেলিহেলথ সেন্টারে দায়িত্ব পালন করছেন। সেন্টারটি জরুরিভিত্তিতে খাদ্য, ওষুধ, অ্যাম্বুলেন্সসেবা দিচ্ছে।’ ♦