বিনোদন ডেস্ক: করোনার এই যে পরিস্থিতি, তা একদিন ঠিকই কেটে যাবে। আমরা শুধু কিছু নিয়মকানুন মেনে চললেই হয়। করোনা এখন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি অবনতি না হতে বেশির ভাগ এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। অনেকেই দেখছি তা মানছেন না। আমি সবাইকে একটা কথা বলতে চাই, লকডাউন মানে লকডাউন—এটা যেন সবার মাথায় থাকে।
মাসখানেক যাবৎ আমি ঘরেই আছি। কোথাও যাচ্ছি না। ঘরে অনেক কাজ। এসব করছি। আমি তো মনে করি, নারীদের ঘরবন্দী এই সময়টা কাটাতে খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না। কারণ, আমরা এ প্রক্রিয়ায় অভ্যস্ত। তবে পুরুষদের একটু সমস্যা হচ্ছে। তরুণেরাও সমস্যায় আছে। মেয়েদের সময় কাটানোর কিছুই নেই। তারা তো সময়ই পায় না। আমি নিজেই তো দেখছি। একটা বাড়িতে নানা ধরনের কাজ থাকে। সকাল–সন্ধ্যা কাজ আর কাজ। বাসার কাজে সহযোগিতা যাঁরা করতেন, তাঁরা কেউই তো এখন আর নেই। সবাইকে ছুটি দিতে হয়েছে। আমার তো মনে হয়, মেয়েদের আরও বেশি সময় হাতে পেলে বোধ হয় ভালো হতো।
তবে করোনায় সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছেন, দেশের শ্রমজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষের দিন আনে দিন খাওয়া এসব মানুষ বড় ধরনের সংকটে পড়েছেন। সরকারও ভাবছে এ ধরনের মানুষকে নিয়ে। পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং দাতা সংস্থা এই সংকট কীভাবে কাটিয়ে ওঠা যায়, সে ব্যাপারে সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখছে।
ইতিহাস ঘাঁটলে আমরা দেখতে পাই, প্রতি ১০০ বছর পর পর পৃথিবীতে একটি করে মহামারি আঘাত হেনেছে। এই সময়ের মধ্যে ছোট ছোট আকারেও কিছু ঘটেছে। করোনা ভাইরাসের বিষয়টি একদমই নতুন। এই ভাইরাস খুবই জটিল, যা আমরা খালি চোখে দেখতে পাই না। আমার কাছে এটাকে প্রাকৃতিক ব্যাপার বলেই মনে হয়। আমরা মানুষেরা প্রকৃতির ওপর অনেক অত্যাচার করেছি, করিও—ভবিষ্যতেও হয়তো করব। কারণ, আমরা ইতিহাস থেকে শিখি না। তাই আমার মনে হয়, প্রকৃতির প্রতি অবিচারের একটা প্রতিফলন হয়তো দেখতে পারছি।
করোনা নিয়ে সবাই আতঙ্কিত। আমি বলব, আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। সবাইকে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলব। সচেতন থাকুন। নিজেদের নিরাপদে রাখুন। আপনি নিজে নিরাপদে থাকলে অন্যরাও নিরাপদে থাকবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও সরকার নানা ধরনের পরামর্শ প্রতিনিয়ত দিচ্ছে। এসব কঠোরভাবে মেনে চলুন।
ছেলেদের জন্য, তরুণদের জন্য খুব মুশকিল। তবে আমি তাদের বলব, তোমরা যারা পড়াশোনা করছ, তারা এদিকটায় মনোযোগী হও। আগে যেমন নানা অজুহাতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাইরে যেতে হতো, এখন তা করতে হচ্ছে না। তার মানে এখন তোমরা স্বাধীন। আমাদের দেশেও কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান শুনলাম অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। পুরুষ মানুষের ক্ষেত্রে ঘরে বসে বসে টেলিভিশন দেখতে হবে। যারা এত দিন বাইরে কাজে ব্যস্ত থাকতেন, তারা এই সময়টায় মা, স্ত্রী কিংবা বোনদের কাজেও সহযোগিতা করতে পারেন।
কাজের ব্যস্ততায় আমরা একে অন্যের খোঁজখবর নিতে পারতাম না। আমি তো একটা লম্বা তালিকা করে নিয়েছি। যাঁদের অনেক দিন পর্যন্ত কোনো খবর নিতে পারতাম না, তাঁদের খবর নিচ্ছি। কোন দেশে কে কে আছেন, তাদের খবর নিচ্ছি। সব দেশে তো সবাই একই সমস্যার মধ্যে আছি। আমারও খবর নিচ্ছেন অনেকে। আমি তো মনে করি, কারও শত্রুও যদি থাকে, করোনার এই সময়ে তারও খবর নেওয়া উচিত। আমি আবারও বলছি, এ সময়ে শত্রুরও খবর নেওয়া উচিত। এটা এমন একটা সময়, আমাদের ঘরে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। তাই সবাই সবার খবর নিলে দেখবেন ভালো লাগছে।
আমি সার্বক্ষণিক টেলিভিশনে করোনার আপডেট রাখছি। দেশ–বিদেশের সংবাদমাধ্যমের খবরগুলোও দেখছি। নিজে সাবধানতা অবলম্বন করছি, অন্যদেরও বলছি। আমি মনে করি, যাদের মধ্যে সৃজনশীল মন আছে, তারা এই সময়টাকে সবচেয়ে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারেন। ছবি আঁকতে পারেন, গানের রেওয়াজ বাড়াতে পারেন, কবিতা লিখতে পারেন, গল্প-উপন্যাস লিখতে পারেন। আমার কাছে তো মনে হয়, ইশ্, সময় যদি আরেকটু পেতাম। কখন কীভাবে যে চলে সময় যায়! সকালে উঠে কিছু কাজকর্ম করে এরপর রেওয়াজ করতে বসি।
আমি বিশ্বাস করি, এটা কেটে যাবে। সংকট বলি, মহামারি বলি—সৃষ্টিকর্তা আমাদের এটি দিয়েছেন, তিনিই আমাদের উদ্ধার করবেন। আমাদের রক্ষা করবেন। করোনা যখন এসেছে, করোনা চলে যাবে।