বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান হুন্দাই মোটর কোম্পানি। দক্ষিণ কোরিয়ার এ ব্র্যান্ডটি সর্বশেষ ২০০৯ সালে জাপানে গাড়ি বিক্রি করে। চলতি সপ্তাহে এক ঘোষণায় আবার জাপানের বাজারে গাড়ি বিক্রির কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে আপাতত অনলাইনে ইলেকট্রিক ভেহিকেল (ইভি) বিক্রি করা হবে।
আশানুরূপ বিক্রি না হওয়ায় ১২ বছর আগে জাপান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয় হুন্দাই। ইলেকট্রিক ভেহিকেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এ খাতে একচেটিয়া ব্যবসা শুরুর পরিকল্পনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এক্ষেত্রে জাপানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী টয়োটা মোটর। টয়োটার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই টিকে থাকতে হবে হুন্দাইকে।
হুন্দাইয়ের কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে আইওনিক ৫ ও নেক্সো এসইউভি বিক্রি করবে। এর মধ্যে হাইড্রোজেন জ্বালানিনির্ভর ইভি এই নেক্সো এসইউভি।
আর আইওনিক ৫ মডেলটি নিয়ে বেশ উচ্চাশা প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। এই মডেলটি দিয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক মোট ইভি বিক্রির ১০ শতাংশ নিজেদের আয়ত্তে আনতে চান তারা। বর্তমানে তাদের সর্বাধিক বিক্রীত মডেল এটি।
‘আমরা এখনও বিক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করিনি। তবে চলতি বছর মে মাসে অনলাইনে ক্রয়াদেশ গ্রহণ করার পর এ বিষয়ে আরও তথ্য দিতে পারব। জুলাই থেকে সরবরাহ করা হবে সব গাড়ি।’ টোকিওর ওটেমাচি মিতসুই হলে আয়োজিত এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুনরায় ব্যবসা শুরু প্রসঙ্গে কথাগুলো বলেন হুন্দাই মোবিলিটি জাপানের প্রধান শিগেইকি কেটো।
দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ির বাজারে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করছে হুন্দাই ও কিয়া করপোরেশেন। ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ২০০১ সালে প্রতিবেশী দেশ জাপানে গাড়ি বিক্রি শুরু করে হুন্দাই। তবে মাত্র ১৫ হাজার গাড়ি বিক্রির পর নিজেদের ব্যবসা গুটিয়ে নেয় হুন্দাই। টয়োটা, হোন্ডা ও নিশানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে যায় হুন্দাই।
জাপানে প্রতি বছর গড়ে ৫০ লাখ গাড়ি বিক্রি হয়। এর মধ্যে নয়টিই নিজস্ব ব্র্যান্ডের। বিশেষ করে নিজস্ব ব্র্যান্ড টয়োটার দখলে রয়েছে দেশটির ৪০ শতাংশ বাজার। এর বাইরে কিছু বিলাসবহুল মডেল বিক্রি হয় দেশটিতে। এমন পরিস্থিতিতে বেশ নাজুক অবস্থায় রয়েছে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলো।
জাপানে ইলেকট্রিক ভেহিকেলের বাজারে ব্যবসা করতে উš§ুখ হয়ে রয়েছে হুন্দাইয়ের পাশাপাশি টেসলা ইনকরপোরেশনের নানা মডেল, ভোকসওয়াগেন এজি ও স্টেলানটিসের মতো ব্র্যান্ডগুলো।
যদিও গত বছর দেশটিতে মাত্র ২০ হাজার ইভি বিক্রি হয়েছে। তবে এর আগের বছরের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ বেশি ইভি বিক্রি বেড়েছে এখানে।
জাপান অটোমোবাইল ইমপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন (জেএআইএ) জানায়, এ সময় তিনগুণ বেশি বেড়েছে আমদানি করা ইভির চাহিদা। সে হিসাবে বিদেশের নানা ব্র্যান্ডের ৮ হাজার ৬১০টি ইভি বিক্রি হয় জাপানে। তাছাড়া ২০৩০ সালের আগে ইভি প্রস্তুতের পরিকল্পনাও নেই টয়োটার। একে সুযোগ হিসেবে দেখছে হুন্দাই। কেননা জাপানে তাদের মূল প্রতিযোগী টয়োটা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় হুন্দাইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জেহুন চ্যাং জাপান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার জন্য ক্ষমা চান। ১২ বছর আগে ব্যবসা বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিল না বলে জানান তিনি। আরও জানান, বর্তমানে জাপানের রাস্তায় চলাচল করছে মাত্র ৬০০টি হুন্দাই গাড়ি।
তিনি বলেন, এ সমস্যা সমাধানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আমরা বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। আমরা একেবারে শূন্য থেকে শুরু করতে চাই এবং গ্রাহকদের চাহিদাকে প্রাধান্য দিতে চাই।
এ অনুষ্ঠানের শেষে গণমাধ্যমকে কেটো বলেন, অনলাইন বিক্রয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি। এজন্য আমরা অনলাইনে সামাজিক গেমিং কোম্পানি ডেনা কোং ও বিমা প্রতিষ্ঠান সম্পো হোল্ডিংসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। গাড়িগুলো কেনা যাবে হুন্দাই মোটরের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট ও মোবাইল ফোন অ্যাপে অর্ডার দিয়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে পেমেন্ট থেকে শুরু করে শিপিং সবই সম্পন্ন করা হবে অনলাইনে। বিক্রি বাড়ার পর সরাসরি বিক্রয় শুরু করব। এজন্য ইয়োকোহামা শহরে একটি এক্সপেরিয়েন্স সেন্টার চালু করা হবে, যেখানে গাড়িগুলো প্রদর্শনীর ব্যবস্থা রাখা হবে। ♦