একজন মেয়ের জীবনে প্রতি মাসে মাসিক ও সে সময় তলপেটে মৃদু ব্যথা ও অস্বস্তি লাগা স্বাভাবিক। কিন্তু তীব্র ব্যথা ও অসুস্থতা থাকলেও অনেক সময় বিষয়টিকে স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। অথচ এই তীব্র ব্যথা নারীর জীবনকে বাধাগ্রস্ত করে।
যেসব কারণে এমন হয়, তার মধ্যে এন্ডোমেট্রিওসিস অন্যতম। বাংলাদেশে প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ নারী এতে ভোগেন।
এন্ডোমেট্রিওসিস হলে মাসিকের শুরু থেকে ব্যথা শুরু হয়, মাঝামাঝি প্রবল হয়। এমনকি শেষ হয়ে গেলেও কিছু ব্যথা থেকে যায় কয়েক দিন। আবার পরবর্তী চক্রে এটি শুরু হয়।
বেশিরভাগ নারী একে স্বাভাবিক ধরে নেয়, তলপেটে সেঁক দেয় বা ব্যথানাশক বড়ি খায়। ফলে এন্ডোমেট্রিওসিস শনাক্ত হতে আট থেকে ১০ বছর পেরিয়ে যায়। এই দেরিই ক্ষতিকর। ফলে রোগটি আরও জটিল হয়, ব্যথা আরও তীব্র হয়। মাসিকের সময় ব্যথা ছাড়াও পায়খানা-প্রস্রাবের সময় এবং সহবাসের সময় ব্যথা হতে থাকে। বন্ধ্যত্ব হতে পারে। অনেকের মাসিক চলাকালে তলপেটে রক্ত জমা হয়ে চকলেট সিস্ট হতে পারে।
মা, খালা ও ফুফুদের এ সমস্যা থাকলে এ সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
এন্ডোমেট্রিওসিস মেয়েদের হয়ই, এমন ভাবার সুযোগ নেই; কারণ ইদানীং নানা ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। কখনও ওষুধ দিয়ে মাসিক কিছুদিন, যেমন এক বছর বন্ধ রাখা হয়। এভাবে জরায়ুর অভ্যন্তরীণ পর্দা বা এন্ডোমেট্রিয়ামকে আর বাড়তে দেয়া হয় না। এই চিকিৎসাপদ্ধতিতে স্বল্প মাত্রার জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা প্রজেস্টেরন-জাতীয় হরমোন ব্যবহৃত হয়।
তাছাড়া জিএনআরএইচ-জাতীয় ওষুধও ব্যবহার করা হয়। উচ্চমূল্য ও দীর্ঘদিন ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য অ্যাড ব্যাক থেরাপি দেয়া হয়ে থাকে। এ ছাড়া ব্যথা নিরাময়ের জন্য ব্যথানাশক দেয়া যায়।
তবে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।
মেডিকেল চিকিৎসা ছাড়াও এর জন্য শল্যচিকিৎসা রয়েছে। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারা ল্যাপরোস্কপির মাধ্যমে চকলেট সিস্ট বের করা বা যেখানে অস্বাভাবিক এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু আছে, তা পুড়িয়ে ফেলা যায়। তাছাড়া এই রোগের জন্য বন্ধ্যত্ব হয়ে থাকলে সেটির চিকিৎসার নানা পদ্ধতি রয়েছে।
জটিল এ রোগ পুষে রাখা কিংবা শনাক্তকরণ বা চিকিৎসায়ও কালক্ষেপণ করা ঠিক নয়। মাসিকের সময় তলপেটে তীব্র ব্যথা হলে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। রোগনির্ণয়ের জন্য রোগের ইতিহাস ও শারীরিক পরীক্ষার সঙ্গে আলট্রাসাউন্ড, প্রয়োজনে এমআরআই করতে হতে পারে। ♦