হিটলারের ৪৮ বাক্স গুপ্তধনের খোঁজ মিলল। এর আনুমানিক দাম ৫০ কোটি পাউন্ড। এমন দাবি গুপ্তধন শিকারিদের একটি দলের। দক্ষিণ পোল্যান্ডের একটি প্রাসাদে লুকিয়ে রাখা রয়েছে হিটলারের এ গুপ্তধন। শিগগির যা খুঁড়ে বার করতে চলেছেন গুপ্তধন শিকারিরা।
দক্ষিণ পোল্যান্ডের মিনকওস্কিইয়ে রয়েছে ওই প্রাসাদ। প্রাসাদটি ১৮ শতকের। সাবেক প্রুসিয়ার জেনারেল ফ্রেডরিচ উইলহেম ভন সেদলিজ এটি বানিয়েছিলেন। এখন এটি সিলেসিয়ান ব্রিজ ফাউন্ডেশনের অধীন। দীর্ঘ সময়ের জন্য এ সম্পত্তি লিজ নিয়েছে সংস্থাটি।
সংস্থারটি এক কর্মকর্তা রোমান ফারমানিয়াকের নেতৃত্বে গুপ্তধনের চূড়ান্ত পর্যায়ের খোঁজ শুরু হতে চলেছে।
অতীতে মিনকওস্কিইয়ের এ প্রাসাদে এক সময় বহু মানুষের যাতায়াত ছিল। তাদের একজন ছিলেন ভন স্টেইন। ভন নিযুক্ত ছিলেন হিটলারের সেনাবিাহিনীতে। প্রাসাদে তার প্রেমিকা থাকতেন। প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে আসতেন তিনি। কখনও কখনও প্রাসাদে থেকেও যেতেন।
সেই থেকে গুপ্তধন লুকিয়ে রাখার নিরাপদ জায়গা হিসাবে এ প্রাসাদকে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। ভনের মতো হিটলার বাহিনীর আরও অনেক সেনা এ প্রাসাদে সোনা, গয়না, মুল্যবান জিনিস লুকিয়ে রাখতেন।
এ প্রাসাদে সে সময় মূলত নাজি বাহিনীর পতিতালয় ছিল। সে সূত্রে এ প্রাসাদে যাতায়াত শুরু হয়েছিল ভন ও হিটলারের অন্য সেনাদের। সেনাবাহিনীর প্রভাবশালী লোকেদের নিত্য যাতায়াত ছিল এখানে। সেনা অফিসারদের নির্দেশে সোনা, গয়না ইত্যাদি লুকিয়ে রাখার জন্য এ প্রাসাদকে বেছে নিয়েছিলেন তারা। উদ্দেশ্য ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষের পর এই গুপ্তধন দিয়ে সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করবেন হিটলার।
সিলেসিয়ান ব্রিজ ফাউন্ডেশন প্রাসাদটি লিজ নেয়ার পর প্রথমে প্রেমিকাকে লেখা ভনের একটি চিঠি উদ্ধার করে। উদ্ধার হয় আরও কিছু নথিও। উদ্ধার হওয়া এসব কাগজপত্র থেকে মোট ১১টি গুপ্তধনের খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। আর ওই চিঠিতে গুপ্তধনের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রেমিকাকে অনুরোধ করেছেন ভন।
পোল্যান্ডের রোজটোকার একটি প্রাসাদেও গুপ্তধনের সন্ধান মিলেছে। কিন্তু নথি অনুযায়ী, ওই প্রাসাদের কুয়োর ৬৪ মিটার গভীরে ওই গুপ্তধন লুকনো রয়েছে, যা খুঁড়ে বার করা দুঃসাধ্য।
সে তুলনায় মিনকওস্কিইয়ের এ প্রাসাদের তলায় লুকিয়ে রাখা ৪৮ বাক্স গুপ্তধন খুঁড়ে বার করা সহজ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে এ সম্পত্তি লুঠ করা হয়েছিল বলে বিশেষজ্ঞদের অনুমান।
এছাড়া এ অঞ্চলের বিত্তবান জার্মানরা সে সময় রাশিয়ার সেনার আগ্রাসন থেকে নিজেদের রক্ষা করার বিনিময়ে মূল্যবান গয়নাসহ বহুমূল্য জিনিস হিটলার বাহিনীর কাছে সমর্পন করেছিলেন। এ গুপ্তধনের বেশির ভাগটাই বিত্তবান জার্মানদের। প্রাসাদের বিভিন্ন জায়গায় নাকি লুকনো রয়েছে সে সব সম্পত্তি। নীল নকশা বানিয়ে সেগুলো খুঁড়ে বার করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
গবেষণায় জানা গিয়েছে, রাশিয়ার সেনা পোল্যান্ডের দখল নেয়ার পর ভনের সেই প্রেমিকা নাম বদলে প্রাসাদে থাকছিলেন। তিনি রাশিয়ান সেনাবাহিনীর একজনের সঙ্গে বিয়েও করে নেন। কিন্তু প্রেমিক ভনের অনুরোধে গুপ্তধনের বিষয়টি সারাজীবন লুকিয়ে রেখেছিলেন।
পরবর্তীকালে প্রাসাদটি রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সদর দফতর হয়ে ওঠে। পরে হয়ে যায় সিটি হল অফিস, তারপর একটি সিনেমা হলে পরিণত হয় এটি। বার বার হাতবদল হলেও গুপ্তধনের খোঁজ কেউ পাননি।
এক সময়ে লোকের ভিড়ে গমগম করা সেই প্রাসাদ আজ ভগ্নপ্রায়। তাও সবার চোখ এড়িয়ে বুকের মধ্যে কোটি টাকার সম্পদ আগলে রেখেছে সে। ♦