ই-কমার্স প্রতারণার বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিল প্রতিযোগিতা কমিশন

0

ই-কমার্স প্রতারণার বিরুদ্ধে অনেক আগে থেকে সক্রিয় ছিল বলে দাবি করেছে ব্যবসায় প্রতিযোগিতা বিরোধী কর্মকাণ্ড রুখতে গঠিত প্রতিযোগিতা কমিশন। কমিশনের দাবি, ইভ্যালির প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে তারা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করেছিল।

এক বছর আগে ইভ্যালির একটি অফারের বিরুদ্ধে করা সেই মামলার রায়ে শাস্তি পেয়েছিল ইভ্যালি। তবে প্রচারের অভাবে সে তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছায়নি।

সম্প্রতি কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণাকাণ্ডে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, প্রতিযোগিতা কমিশনসহ একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দুষছেন গ্রাহক, মার্চেন্ট ও খাত সংশ্লিষ্টরা।

এর বিপরীতে প্রতিযোগিতা কমিশন বলছে, প্রতারণা ঠেকাতে সরকারের অন্য সংস্থাও কাজ করছে। আর প্রতিযোগিতাবিরোধী কর্মকাণ্ড থামাতে তারা তৎপর রয়েছে। কিন্তু কমিশনের এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন গ্রাহক, মার্চেন্ট ও খাত সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে প্রতিযোগিতা কমিশন সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিতে পারেনি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) আইনজীবী ও করপোরেট আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম, কোন কোন অবস্থায় প্রতিযোগিতা কমিশন পদক্ষেপ নেবে, সেগুলো প্রতিযোগিতা আইনে বলা আছে। কিন্তু আমরা বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাই, প্রতিযোগিতা কমিশনের যখন যেখানে তৎপর হওয়ার দরকার ছিল, তখন ওনারা বসেছিলেন, পদক্ষেপ নেননি। এ কারণে গ্রাহকরা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রতিযোগিতা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ১২ আগস্ট ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি ডটকম লিমিটেড তাদের ওয়েবসাইটে ‘ঈদ ধামাকা’ নামে একটি অফার ছাড়ে।

যেখানে বিভিন্ন পণ্য কেনার বিপরীতে ৮০ শতাংশ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক দেয়ার ঘোষণা ছিল।

আরও জানা যায়, সেই অফারের শর্তাবলি অংশের চার নম্বর শর্তে বলা হয়েছিল, ‘ঈদ ধামাকা’ ক্যাম্পেইনে ক্রেতাকে পুরো টাকা পরিশোধ করতে হবে। টাকা পরিশোধের তিনদিন পর গ্রাহকের ক্যাশব্যাক আসবে। সেই ক্যাশব্যাক নগদে পাবেন না গ্রাহকরা। সেটা যোগ হবে গ্রাহকের ইভ্যালি অ্যাকাউন্টে। সেই টাকা দিয়ে আবার ইভ্যালি থেকে কেনাকাটা করতে হবে। সেক্ষেত্রে পণ্যের ৬০ শতাংশ ব্যালান্স থেকে ও ৪০ শতাংশ নিউ পেমেন্ট করতে হবে। ওই শর্তের কারণে ৮০-১৫০ শতাংশ ক্যাশব্যাক অফারে যে ক্রেতা আকৃষ্ট হয়ে ইভ্যালি থেকে পণ্য ক্রয় করবেন, তাকে ক্যাশব্যাক সুবিধা নিতে হলে আরেকটি পণ্য সেই পণ্যের মূল্যের ৪০ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করে কিনতে হবে।

কমিশন সূত্র জানায়, ইভ্যালি ‘ঈদ ধামাকা’ একবারই অনলাইনে দিয়েছিল ও এর স্থায়িত্বও ছিল স্বল্প সময়। ইভ্যালির প্রতারণার ফাঁদ থেকে গ্রাহকদের রক্ষার্থে ২০২০ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করে কমিশন। সে মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতেই ইভ্যালি ‘ঈদ ধামাকা’ অফার বন্ধ করে।

জানা যায়, ইভ্যালির অস্বাভাবিক অফারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কমিশনের উপ-পরিচালক (ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি ও গবেষণা) আনোয়ার-উল-হালিমকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলে হয়েছে।

তদন্তকাজ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগির ইভ্যালির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত জানাবে কমিশন।

কমিশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইভ্যালির ঈদ ধামাকা অফারের ফলে বাজারে প্রতিযোগিতার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছিল। তাদের হস্তক্ষেপেই সেই অফার বন্ধ করা হয় এবং পরে আর তেমন অফার দেয়া হয়নি।

বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, কেউ অভিযোগ করেনি ইভ্যালি বিরুদ্ধে। আমরা ইভ্যালির বিরুদ্ধে ২০২০ সালে স্বপ্রণোদিত হয়ে তাদের একটা অফারের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। সেটার শুনানি হয়েছে। সেখানে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আট মাস আগে একটা রায়ও দেয়া হয়েছে। ওই অফারটা তারা বন্ধ করেছে।

তিনি বলেন, তাদের আরও অফার আমাদের কাছে আইনবিরোধী মনে হয়ছে। সেগুলোর তদন্তকাজ প্রায় শেষ হয়েছে। আমরা হয়তো শিগগিরই আদেশ দেব। ইভ্যালি ছাড়া অন্যদের তথ্য-উপাত্তও আমরা সংগ্রহ করছি। সেখানেও যদি প্রতিযোগিতাবিরোধী কিছু হয় আমরা ব্যবস্থা নেব।

তিনি আরও বলেন, আমরা ইভ্যালির বিরুদ্ধে রায় দিলাম। তারা অফারটা বন্ধ করলো। তারপরেও কেউ সতর্ক হলোনা কেনো, আমার জানা নেই। ক্রেতাদের সতর্ক করতে বিষয়টি কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

কমিশনের সেই উদ্যোগ ও অন্তর্বর্তীকালীন ওই রায়ের সেভাবে প্রচারণা হয়নি জানিয়ে প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন বলেন, আমরা স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলা করলাম, রায় দিলাম। কিন্তু সেগুলো ঠিকমত প্রচার হয়নি। কমিশনের উদ্যোগের প্রচারণা হলে এত ক্রেতা প্রতারিত হতেন না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Share.