ইভ্যালিতে বড় ধরনের কেলেঙ্কারি হয়েছে: সিপিডি

0

বিদেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর পণ্যের মান, সরবরাহ ব্যবস্থা ও লেনদেন নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। প্রতি বছর এর আকার দ্বিগুণ হচ্ছে।

বর্তমানে আট হাজার কোটি টাকার খাত এটি। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ছাড়াই চলছে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো দায় এড়িয়ে যাওয়ায় ইভ্যালিতে বড় ধরনের কেলেঙ্কারি হয়েছে।

এমন মতামত দিয়েছেন দেশীয় বিশেষজ্ঞরা। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এমন মন্তব্য করেছেন তারা।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বিদ্যমান আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে ই-কমার্স খাতের সমস্যা ও অস্থিরতা সমাধান করা সম্ভব। নতুন করে কোনো আইন করার প্রয়োজন নেই। প্রথমেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সংস্থাকে এ বিষয়ে স্ব-উদ্যোগে সমাধান করতে হবে।

অর্থ পাওনাদারদের ইভ্যালির কাছে শেয়ার ছেড়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহক উভয়কে বাঁচানো সম্ভব। এখানে বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে। একাধিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকার পরও এমন হয়েছে।

‘ই-কমার্স খাতের চ্যালেঞ্জ: সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট ও করণীয়’ শীর্ষক ওই ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বলেন, ‘ই-ভ্যালিতে বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থার সক্ষমতা নিয়ে নিয়মিত প্রশ্ন উঠছে। আইন থাকলেই হবে না, আইনের প্রয়োগ হওয়াও দরকার।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম বলেন, আইনের অভাব নাই, নতুন আইনেরও দরকার নাই। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা যদি বাড়ানো যায় এবং সেই প্রতিষ্ঠানগুলো যদি সততার সঙ্গে কাজ করে তাহলে এ ধরনের অনিয়ম ঠেকানো যাবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, প্রতিযোগিতা কমিশন ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) যেসব আইন আছে, তা দিয়ে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এখানে বিএফআইইউ দায়িত্ব পালনে যথেষ্ট উদাসীনতা দেখিয়েছে। অথচ বিষয়টি তাদের খতিয়ে দেখার দায়িত্ব।

বিভিন্ন আইনের বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থাগুলো ‘পদে পদে অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে’ মন্তব্য করে প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উদাহরণ টানেন করপোরেট আইন বিশেষজ্ঞ তানজিব।

তিনি বলেন, সন্দেহজনক লেনদেনের ঘটনায় গত বছর সেপ্টেম্বরে ইভ্যালির লেনদেন এক মাস বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু এরপর ওই নিষেধাজ্ঞা আর বাড়ানো হয়নি অথবা নিষেধাজ্ঞা বলবতও রাখা হয়নি। তখন স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষ মনে করল, যে বিএফআইইউ এ বিষয়টা নিয়ে গবেষণা করেছে বা পরীক্ষা করে দেখেছে তাহলে সমস্যা নেই।

তানজিব বলেন, বিএফআইইউর ঘটনার পর আইনও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুটি সংস্থাকে ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু দুটি প্রতি প্রতিষ্ঠান দুই রকম প্রতিবেদন দিল। ফলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ ঘটনার বিস্তারিত তদন্তে যে রকম জ্ঞান ও দক্ষ লোকবল দরকার, তা নেই। সুতরাং বিষয়টি এভাবেই ঘোলা হয়েছে। এখন জনগণের পাওনা টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন? অনেকে বলাবলি করছে, যে সরকারি অর্থায়ন থেকে জনগণের পাওনা মিটিয়ে দেয়া হোক।

এ প্রস্তাবের বিরোধীতা করে তিনি বলেন, জনগণের করের টাকা সরকারের কাছে আমানত। একজনের লুটপাটের টাকা পরিশোধে আমি ট্যাক্স দিইনি—এটা সংবিধানবিরোধী।

তাই এখন কোম্পানি আইন অনুযায়ী ওই কোম্পানিকে অবসায়ন করে যে অর্থ পাওয়া যায় তা দিয়ে পাওনা পরিশোধ করা যেতে পারে।

আলোচনায় ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম আরএফ হোসাইন বলেন, ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জসহ বেশ কয়েকটি ই-কমার্স কোম্পানি দেশের অর্থনীতিতে অনেক বড় বিপদ সংকেত দিয়েছে। দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সবগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করেই এ খাত নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। ইভ্যালিসহ সম্প্রতি যা ঘটেছে—তা সব পক্ষের লোভের কারণেই হয়েছে। এখন জনগণের বিপুল পাওনা টাকা কোথায় আছে, তা খুঁজে বের করে যেটুকু পাওয়া যায়, তাই ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর ‘ডিজিটাল মনিটরিং’ দরকার। কিন্তু তা করার মতো প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা ও জনবল সরকারের নেই। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতাও বড় সমস্যা।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কারণে পুরো ই-কমার্স খাতের আস্থায় চিড় ধরেছে। অনেক মানুষের আটকে থাকা হাজার কোটি টাকা ফেরত দেয়ার মতো অবস্থায় অনেক প্রতিষ্ঠান নেই। এখন কীভাবে অর্থ ফেরত পাবে—সে প্রশ্ন সামনে আসছে।

Share.