বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিতে চায় বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ার লিমিটেড। ২০২০ হিসাববছরের জন্য এ লভ্যাংশ দেয়ার বিষয়টি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বার্ষিক সাধারণ সভায় বিনিয়োগকারীরা অনুমোদন করলে এটি চূড়ান্তভাবে পাস হবে।
গতকাল সোমবার (পয়লা মার্চ) প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) বিনিয়োগকারীদের এ তথ্য জানিয়েছে।
কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে আলোচিত বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর লভ্যাংশ-সংক্রান্ত বিষয়ে একমত হন সবাই।
জানা গেছে, ২০২০ সালে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৪৩ টাকা ৯৪ পয়সা। আগের বছরে যা ছিল ৮১ টাকা ৮৩ পয়সা। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য ছিল ১২৩ টাকা আট পয়সা, যা আগের বছরে ছিল ১৩২ টাকা ১৪ পয়সা।
আলোচিত বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নগদ টাকার প্রবাহ ছিল ৪৬ টাকা ৩৬ পয়সা; আগের বছর যা ছিল ৮২ টাকা ৮৪ পয়সা।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, লভ্যাংশ অনুমোদন ও অন্য করণীয় বিষয় নির্ধারণে বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৯ এপ্রিল। ওইদিন বেলা ১১টায় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বার্ষিক সাধারণ সভাটি অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২৩ মার্চ।
ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ার
‘গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে’ থেকে নাম বদলে হয়েছে ‘ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ার’। গত বছরের ২৬ নভেম্বর থেকে কোম্পানিটির শেয়ার পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করছে। এরপর ধারাবাহিকভাবে প্রতি কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বাড়ছে।
হরলিকস, মালটোভা, গ্ল্যাক্সোজ-ডি ও সেনসোডাইন’র মতো পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করা গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ১৯৭৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কনজিউমার হেলথকেয়ার ও ফার্মাসিটিক্যালস দুই ইউনিটের মাধ্যমে সাফল্যের সঙ্গে ব্যবসা করলেও লোকসান দেখিয়ে ২০১৮ সালে ওষুধ উৎপাদন কারখানা ও ফার্মাসিউটিক্যাল বিজনেস ইউনিটের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বহুজাতিক কোম্পানিটি।
এরপর ইউনিলিভারের কাছে শেয়ার বিক্রির ঘোষণা আসে। এ সংক্রান্ত প্রথম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর। সে সময় ইউনিলিভার ও জিএসকের পক্ষ থেকে দুটি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারত, বাংলাদেশ ও এশিয়ার অন্য ২০ দেশের বাজারে জিএসকের চলমান কনজিউমার হেলথ ড্রিংকস ব্যবসা কিনে নিচ্ছে অ্যাংলো-ডাচ জায়ান্ট ইউনিলিভার।
প্রথমে সেটফার্স্টের কাছে থাকা জিএসকে বাংলাদেশের সব শেয়ার ইউনিলিভারের মূল কোম্পানি ইউনিলিভার এনভির কাছে বিক্রি করার কথা ছিল। পরে সে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ইউনিলিভারের মূল কোম্পানির পরিবর্তে এর সাবসিডিয়ারি ইউনিলিভার ওভারসিজ হোল্ডিংস বিভির কাছে সেটফার্স্টের সব শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এর অংশ হিসেবে গত ২৮ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্লক মার্কেটের মাধ্যমে জিএসকের শেয়ার কিনে নেয় ইউনিলিভার। ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৪৪ শেয়ারের প্রতিটি কেনা হয় ২ হাজার ৪৬ টাকা ৩০ পয়সা করে। শেয়ার কিনে নেয়ায় দুদিনের মধ্যে নতুন এমডি নিয়োগ দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। সে সঙ্গে ‘গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে’ নাম বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম দেয়া হয় ‘ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ার’।
নাম বদল হলেও ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত শেয়ারবাজারে আগের নামেই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হচ্ছিল। ২৬ নভেম্বর থেকে নতুন নামে লেনদেন শুরু হওয়ার পাশাপাশি ক্যাটাগরিও বদলে যায় কোম্পানিটির। ওষুধ ও রসায়ন খাত থেকে কোম্পানিটি খাদ্য খাতের আওতাভুক্ত হয়। নতুন নাম ও নতুন ক্যাটাগরিতে লেনদেনের শুরু থেকে ইউনিলিভার কনজিউমার কেয়ার বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রে আসে। ♦