আড়াই হাজার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বই পড়ে কম্পিউটার শিখছে

0

শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রযুক্তি খাতে দক্ষ করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে দেশের মাধ্যমিক স্তরে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে সরকার। এ ধারবাহিকতায় ২০১২ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ শ্রেণিতে, ২০১৩ শিক্ষাবর্ষে সপ্তম শ্রেণিতে, ২০১৪ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম শ্রেণিতে ও ২০১৫ শিক্ষাবর্ষে নবম-দশম শ্রেণিতে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়।

গত এক দশকে দেশের ৮৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার বিতরণ করেছে সরকার। এর মধ্যে প্রায় ৪৩ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাবও স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এখনও কম্পিউটারের নূন্যতম সুবিধা বঞ্চিত রয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২০ হাজার ২০ হাজার ২৯৪টি। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান ৬৮৪টি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৯ হাজার ৬১০টি। এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে কর্মরত আছেন ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬৮ জন।

মাধ্যমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটি এক লাখ ৯০ হাজার ২২জন। তাদের মধ্যে ছাত্রী ৫৫ লাখ ৭১ হাজার ৩৪৮ জন, যা শতকরা ৫৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের সরকারি-বেসরকারি ২০ হাজার ২৯৪টি বিদ্যালয়ের মধ্যে কম্পিউটার রয়েছে ১৭ হাজার ৭২৮ টি বিদ্যালয়ে। কম্পিউটার নেই এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৫৬৬টি। অর্থ্যাৎ মোট বিদ্যালয়ের ১২ দশমিক ৬৪ শতাংশ বিদ্যালয়ে কোনো কম্পিউটার নেই।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল, এ তিন বছরে কম্পিউটার যুক্ত হওয়া বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়েছে মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। ২০১৯ সালে কম্পিউটার ছিল ৮৭ দশমিক ৩২ শতাংশ বিদ্যালয়ে, ২০২০ সালে ৮৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ, সবশেষ ২০২১ সালে এ সংখ্যা কিছুটা বেড়ে হয় ৮৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

এর মধ্যে কম্পিউটার থাকার হার কিছুটা বেশি সরকারি বিদ্যালয়ে। ২০২১ সালের হিসেব অনুযায়ী, দেশের ৬৮৪ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে কম্পিউটার রয়েছে ৬৪১ টি বিদ্যালয়ে। অর্থ্যাৎ ৯৩ দশমিক ৭১ শতাংশ সরকারি বিদ্যালয়ে কম্পিউটার রয়েছে।

অপরদিকে, দেশের ১৯ হাজার ৬১০টি বেসরকারি বিদ্যালয়ের মধ্যে কম্পিউটার আছে ১৭ হাজার ৮৭টিতে। শতকরা হিসাবে যা ৮৭ দশমিক ১৩ শতাংশ।

মাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার থাকার দিক থেকে বেশ পিছিয়ে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো। দেশের ২ হাজার ৩৮২টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মধ্যে কম্পিউটার রয়েছে মাত্র ১ হাজার ১৭টিতে। অর্থাৎ ৫৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার নেই।

সে হিসেবে কম্পিউটারের ব্যবহারিক শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে দেশের ৫৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এছাড়া সরকারি বিদ্যালয়ের প্রায় ৭ শতাংশ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী কম্পিউটারের ব্যবহারিক শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছে।

কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার প্রায় এক দশক পরও প্রায় ১৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার না থাকায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী কম্পিউটার শিক্ষার সুফল বঞ্চিত হচ্ছে।

শিক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রযুক্তিভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বাধা হিসেবে কাজ করছে বিপুল সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার না থাকা। এতে শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য অর্জন ব্যহত হচ্ছে, সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত হচ্ছে না।

তাদের মতে, শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ বিকাশে তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক জ্ঞান দু-ই অপরিহার্য। শ্রেণীকক্ষে কম্পিউটারের তত্ত্বীয় বিষয়গুলো পাঠদান করে খুব বেশি ফল পাওয়া যাবে না, যদি সরাসরি এর ব্যবহারিক দিকগুলো শেখানো না হয়।

মনে রাখা দরকার, শুধু মুখস্ত করে হয়তো পরীক্ষায় ভালো ফল করা যাবে, কিন্তু আমাদের প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন যে স্বনির্ভর জাতি গড়ার লক্ষ্য তা অনেকাংশে ব্যহত হবে যদি সব শিক্ষার্থীকে সরাসরি কম্পিউটারের ব্যবহারিক দিকগুলো শেখানো না হয়। 

Share.