রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির আত্মার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। আমরা আজ যাই লিখি বা ভাবি না কেন, তার প্রাণবায়ু রবি ঠাকুর। তাঁকে বাদ দিয়ে সাহিত্য জগতে এক পাও চলা সম্ভব নয়। তবে শুধু সাহিত্য নয়, গান, নৃত্য শিল্প, অঙ্ক শিল্প সবকিছুতে ঠাকুর গভীর ছাপ রেখে গিয়েছেন।
বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে যেসব কবি-সাহিত্যিক প্রতিষ্ঠিত করেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একাধারে কবি, নাট্যকার, ছোটগল্পকার, গীতিকার, সুরকার, সাহিত্যিক ও অভিনেতা।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে ১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ জন্মগ্রহণ করেন।
শৈশবে গৃহশিক্ষকের কাছে নানা বিষয়ে তার পড়ালেখার হাতেখড়ি হয়। এরপর তিনি কলকাতা নর্মাল স্কুলে ভর্তি হন। তিনি পড়াশোনার জন্য ১৭ বছর বয়সে বিলাত (গ্রেট ব্রিটেন) যান। সেখানে ব্রাইটন পাবলিক স্কুল ও লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
১৪ বছর বয়সে তার প্রথম কবিতার বই বনফুল প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ সাহিত্য জীবনে তিনি অসংখ্য কবিতা, গান, উপন্যাস ও প্রবন্ধ রচনা করেন। তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ হলো মানসী, সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালী। তার বিখ্যাত নাটক হলো ডাকঘর, বিসর্জন, রক্তকরবী, অচলায়তন। তার বিখ্যাত উপন্যাস হলো গোরা, নৌকাডুবি, শেষের কবিতা, চোখের বালি। তার রচিত গানের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। এশীয়দের মধ্যে প্রথম সাহিত্যিক হিসেবে তিনি এ পুরস্কারটি পান।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বোলপুরে ‘শান্তিনিকেতন’ নামক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেন। তার প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি ‘নাইট’ উপাধি বর্জন করে নিবিড় দেশপ্রেমের পরিচয় দেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ২২ শ্রাবণ মারা যান।
রাষ্ট্রপতির বাণী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬০তম জন্মবার্ষিকীতে আমি তার অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করি।’
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির চেতনা ও মননের প্রধান প্রতিভূ। বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব শাখায় রয়েছে তার অবাধ বিচরণ। তিনি আমাদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগীত স্রষ্টা, চিত্রকর, সমাজচিন্তক এবং দার্শনিক হিসেবেও বিখ্যাত। সর্বোপরি বাঙালি জাতীয়তাবোধের প্রধান রূপকারও তিনি।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসেন ১৯১৩ সালে, গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার অর্জনের মধ্য দিয়ে। তিনিই প্রথম অ-ইউরোপীয় হিসেবে বিশ্বসাহিত্যের এই সর্বোচ্চ স্বীকৃতি অর্জন করেন। তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির বহুত্ববাদ, বৌদ্ধ ধর্মের অহিংস ও ইসলাম ধর্মের সুফিবাদ এবং বাংলার বাউলদের ভাববাদী চেতনার সমন্বয় সাধন করে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেন।’
তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ মানবতাবাদী অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি। পূর্ববঙ্গ তার শিল্পীসত্তা, মানবসত্তা এবং ঐক্য ও সম্প্রীতির আভায় সমুজ্জ্বল। ফলে সাধারণ বাঙালির দুঃখ-বেদনার কথক হিসেবে যে রবীন্দ্রনাথকে আমরা পেয়েছি, তা পূর্ববঙ্গেরই সৃষ্টি। এসবের পাশাপাশি মানুষের প্রত্যক্ষ কল্যাণ কামনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষার বিভিন্ন পর্যায় নিয়ে ভেবেছেন। শিশুসহ নতুন প্রজন্মকে সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন শান্তিনিকেতন। সেই সঙ্গে তিনি পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক শিক্ষাকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। মানবতাবাদী কবি রবীন্দ্রনাথ শিক্ষার ক্ষেত্রে চিরকাল বিশ্বের জানালাকে খুলে দেয়ার কথা বলেছেন।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, রবীন্দ্রনাথের বিশালতা ও তার সৃষ্টির অপূর্ব মাধুর্যকে অন্তরাত্মা দিয়ে উপলব্ধি করতে হলে রবীন্দ্র চর্চার বিকল্প নেই। আমি আশা করবো জগৎ-সংসারকে গভীরভাবে জানতে তরুণ প্রজন্ম রবীন্দ্র সাহিত্যে অবগাহন করবে, রবীন্দ্র চর্চায় থাকবে ব্যাপৃত- যা কেবল আচার সর্বস্ব নয়, জীবন সর্বস্ব। রবীন্দ্র চেতনার আলোকে সাম্য ও শান্তিময় সমাজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন আরো দৃঢ় হোক- এ কামনা করি। ♦