খেলা ডেস্ক: ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি ছিল ’৯৯ বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ার টুর্নামেন্ট। সেরা তিনে থাকতে পারলে জায়গা মিলবে বিশ্বকাপে। তবে বাংলাদেশ চাইছিল যেন তার চেয়েও বেশি। তাইতো ১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি জিতেই জায়গা করে নিলো বিশ্বকাপের মঞ্চে।
বাংলাদেশ তখন বিশ্ব ক্রিকেটে আসছি আসছি করছে। কিন্তু কাঙ্খিত সাফল্যের দেখা মিলছিলো না। অবশেষে প্রাক্তন ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটার গর্ডন গ্রিনিজের হাত ধরে বিশ্ব মঞ্চে প্রথমবারের মতো টাইগাররা চিনিয়েছে নিজেদের জাত। ফাইনালে শক্তিশালী কেনিয়াকে হারিয়ে পৃথিবীকে বাঘের গর্জনে শুনিয়েছে, আসছে বাংলাদেশ।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের কিলাত কেলাব ক্লাব মাঠে ১২ এপ্রিল শুরু হয় বাংলাদেশের স্বপ্নের ফাইনাল। তবে ম্যাচটির ফল আসে আজকের এ দিন, ১৩ এপ্রিলে। আজ পূর্ণ হলো বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা জয়ের ২৩ বছর।
বৃষ্টির কারণে প্রথম ইনিংসে কেনিয়া ব্যাটিং করার পর ১২ তারিখে খেলা আর মাঠে গড়ায়নি। ১৩ তারিখ ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথডে নতুন লক্ষ্যে খেলতে নামে বাংলাদেশ।
ফাইনালে টসে জিতে কেনিয়াকে আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আকরাম খান। অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে যথাযথ প্রমাণ করে ৫৮ রানের মধ্যে কেনিয়ার ৩ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক মরিস ওদুম্বেকে নিয়ে শতরানের জুটি গড়েন স্টিভ টিকোলো। ওদুম্বে ৪৩ রান করে ফিরলে আর বড় জুটি গড়তে পারেনি কেনিয়া। তবে টিকোলোর ১৪৭ রানের বিশাল ইনিংসে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৪১/৭ সংগ্রহ দাঁড় করায় দলটি। বাংলাদেশের পক্ষে মোহাম্মদ রফিক ৪০ রানে ৩ উইকেট নেন। এছাড়াও খালেদ মাহমুদ ও সাইফুল ইসলাম পান ২টি করে উইকেট।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের আগে বৃষ্টি হানা দেওয়ায় টাইগারদের নতুন লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৫ ওভারে ১৬৬ রান। জয়ের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ বদলে দেন কোচ গ্রিনিজ। প্রায় বর্তমান যুগের টি-টোয়েন্টি সুলভ ব্যাটিং করতে হবে বলে নিয়মিত ওপেনার আতহার আলী খানকে না নামিয়ে তুরুপের তাস রফিককে ওপেনিং করান কোচ। তার সঙ্গে নামেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয়। যদিও প্রথম বলে ফেরেন দুর্জয়।
তবে তাতে ভড়কে না গিয়ে উলটো কেনিয়ান বোলারদের উপর চড়াও হন রফিক ও মিহাজুল আবেদীন নান্নু। রফিক ১৫ বলে ২টি করে চার ও ছয়ে করেন ২৬ রান। চারে নামা আমিনুল ইসলামও ১০০ স্ট্রাইক রেটে রান তুলতে থাকেন। নান্নুর ২৬, আমিনুলের ৩৭ ও অধিনায়ক আকরাম ২২ রান করলেও ১২৩ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
জয়-পরাজয়ের দোলাচলে থাকা দুই দলের মধ্যে টাইগারদের পক্ষে তখন নায়ক হয়ে দাঁড়ায় খালেদ মাসুদ পাইলট ও সাইফুল ইসলাম। এই দুইজনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের জয় হাতের মুঠোয় চলে আসে। সাইফুল ১৪ রানে আউট হলেও ৭ বলে ১৫ রান করে ইনিংসের শেষ বলে জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন পাইলট।
বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করে হাসিবুল হোসেন শান্ত ও খালেদ মাসুদের দৌঁড় এখনো বাংলাদেশের ক্রিকেটানুরাগীদের মনে বড় জায়গা নিয়ে আছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের পাথেয় হিসেবে কাজ করা এই জয় দিয়েই তো টাইগারদের গর্জনের শুরু। যা চলছে এখনো, আরও বড় অধরা স্বপ্ন ছোঁয়ার লক্ষ্যে।