আইপিডিসির চমক বাড়ছেই

0

হামারির বছরে ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইপিডিসি ফাইন্যান্স আকর্ষণীয় মুনাফা করেছে। মহামারী শুরুর আগের বছরের চেয়েও বেশি মুনাফা করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি।

আইপিডিসিতে বিনিয়োগকারীরা ১২ শতাংশ নগদ অর্থাৎ শেয়ার প্রতি এক টাকা ২০ পয়সা করে লভ্যাংশ পাবেন। আগের বছর প্রতিষ্ঠানটি ১০ শতাংশ নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল।

৩১ ডিসেম্বর ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ সিদ্ধান্তে এসেছে আইপিডিসির পরিচালনা পর্ষদ। এ সময়ে আইপিডিসির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৯০ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৭২ পয়সা।

৩৭১ কোটি ৯০ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটিতে শেয়ার সংখ্যা ৩৭ কোটি ১০ লাখ ৯১ হাজার ৫৪৭টি। শেয়ার প্রতি প্রায় দুই টাকা হিসেবে মুনাফা হয়েছে ৭০ কোটি ৫০ লাখ টাকার কিছু বেশি।

আগের বছর পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩৫৩ কোটি ৪২ লাখ টাকার বেশি। তখন মুনাফা হয় ৬০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ মহামারির বছরেও প্রতিষ্ঠানটি ১৫ শতাংশ বেশি মুনাফা করেছে।

মুনাফার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির সম্পদমূল্যও আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরে শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য আছে ১৬ টাকা ৩৪ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ১৫ টাকা ৩ পয়সা।

লভ্যাংশ সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ মার্চ। বার্ষিক সাধারণ সভা হবে ৪ এপ্রিল। সেদিন চূড়ান্ত হবে লভ্যাংশ।

প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, দুটি কারণে আইপিডিসি ভালো ব্যবসা করেছে। এর প্রথমটি হচ্ছে, গুড করপোরেট গভর্ন্যান্স। মালিকপক্ষের স্বচ্ছতা। দ্বিতীয়টি ম্যানেজমেন্ট।

গতকাল বুধবার পুঁজিবাজারে লেনদেন শেষে আইপিডিসির শেয়ার প্রতি দাম দাঁড়িয়েছে ২৬ টাকা ৮০ পয়সা। গত এক বছরে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ দাম ছিল ৩৫ টাকা ৫০ পয়সা। আর সর্বনিম্ন ছিল ১৮ টাকা ৭০ পয়সা।

আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড
আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড পূর্ববর্তী নাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোমোশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড। এটি বেসরকারি খাতে বাংলাদেশের প্রথম আর্থিক প্রতিষ্ঠান, যা ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), জার্মানির জার্মান ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (ডিইজি), সুইজারল্যান্ডের দ্য আগা খান ফান্ড ফর ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (একেএফইডি), যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (সিডিসি) ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মতো বিশিষ্ট শেয়ারহোল্ডার নিয়ে গঠিত হয়েছে কোম্পানিটি।

সূচনালগ্ন থেকে আইপিডিসি ফাইন্যান্স দেশের শিল্পখাত গঠন ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেছে। ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির ১২ ব্র্যাঞ্চ রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী ৮৮১ জন। গ্রাহক ১৮,২৭০। প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণ পোর্টফোলিও ৫১.১ বিএন ও মোট আমানত পোর্টফোলিও ৫১.০ বিএন।

আইপিডিসির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মো. আবদুল করিম। তিনি বাংলাদেশ সরকারের সাবেক মুখ্য সচিব ও ব্র্যাকের একজন জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সেতু বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।বেলজিয়ামে বাংলাদেশ দূতাবাসে ইকোনমিক অ্যান্ড কমার্শিয়াল কাউন্সেলর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান।

চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণকারী মো. আবদুল করিম ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহাম থেকে ডেভেলপমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে মাস্টার অব সোস্যাল সায়েন্স ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়র রসায়ন বিভাগ থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন, ডি-এইট সম্মেলন, কনফারেন্স অব দ্য পার্টিজ (সিওপি) সামিটসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও বৈঠকে অংশ নেন।

আইপিডিসির ব্যবস্থাপনা টিমে রয়েছেন মমিনুল ইসলাম। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও মমিনুল ইসলামের আর্থিক সেবা শিল্পে ১৮ বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্বিন্যাস, প্রাতিষ্ঠানিক পুনর্গঠন, স্বয়ংক্রিয়তা, প্রক্রিয়া পুনর্নির্মাণ, নিয়ন্ত্রণ ও সম্মতি, সেবা মান এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিশেষ পারদর্শী।

জনাব মমিনুল সাধারণ ব্যাংকিং, পুনর্নির্মাণ, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা সংস্কার ও সম্প্রসারণ, ব্যবসায়িক অনিশ্চয়তা সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা ও বাস্তবায়ন করেছেন।

আইপিডিসিতে যোগাদানের আগে তিনি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও আমেরিকান এক্সপ্রেস বাংলাদেশের (এইবি) বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় পদে কাজ করেছেন। আমেরিকান এক্সপ্রেস বাংলাদেশে কাজ করার সময় তিনি যুক্তরাজ্যের ব্রাইটনে সিক্স সিগমা ব্ল্যাক বেল্ট প্রশিক্ষন অর্জন করেন। এইবি বাংলাদেশ, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, হংকং, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে বিভিন্ন সিক্স সিগমা ব্ল্যাক বেল্ট প্রকল্প পরিচালনা করেন।

জনাব মমিনুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ইকোনমিকস বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন।

Share.