আইপিওর শেয়ার বণ্টনে লটারি প্রথা বাদ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। বাদ দিয়ে আনুপাতিক হারে বিলি করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে সংস্থাটি, যা ১ এপ্রিল থেকে কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) ও সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিডিবিএল) বলা হয়েছে, চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করে ১ এপ্রিল থেকে আইপিওর শেয়ার বিলি করার লটারি প্রথা বাদ দিতে হবে।
কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এ নির্দেশ দিয়েছেন। ৩১ ডিসেম্বর বিএসইসি নতুন পদ্ধতিতে আইপিওর শেয়ার বণ্টনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় তা বাস্তবায়নের নির্দেশ এল।
এতদিন কোনো কোম্পানি আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলতে চাইলে তাদের শেয়ার লটারি করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিলি করা হত। কারণ শেয়ারের তুলনায় আবেদন জমা পড়ত বেশি। ১ এপ্রিল থেকে লটারির পরিবর্তে আবেদনকারীদের মধ্যে আনুপাতিক হারে শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হবে।
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীকে ন্যূনতম ১০ হাজার টাকার শেয়ারের জন্য আবেদন করতে হবে। কেউ চাইলে ১০ হাজার টাকার গুণিতক হারে আবেদন করতে পারেন। শর্ত হল, আইপিওতে আবেদনের আগে একজন বিনিয়োগকারীর তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজ বা সেকেন্ডারি মার্কেটে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে। অতীতে আইপিওতে বিনিয়োগের জন্য এ নিয়ম ছিল না।
লটারি তুলে দিলে আগের ব্যবস্থার পরিবর্তে নতুন নিয়মে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বণ্টন হবে আনুপাতিক হারে। অর্থাৎ, আইপিওতে যারা আবেদন করবেন, তারা সবাই শেয়ার পাবেন। এতে করে আইপিওর নিলামে শেয়ারের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যাওয়া ঠেকিয়ে দেবে নতুন নিয়ম, যার সুফল পাবে পুঁজিবাজার।
বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিনিয়োগকারীদের ‘দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উত্সাহী করতেই’ এ নতুন পদ্ধতি।
জানা গেছে, এ নিয়ম পরিপালন করলে পুঁজিবাজারে নতুন টাকা ঢুকবে। কারণ আইপিওতে আবেদন করার আগে সেকেন্ডারি মার্কেটে আগে বিনিয়োগ থাকতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ নিয়মের ফলে সবাই শেয়ার পাবে। নিলাম হবে না বলে আগের মত আইপিওতে শেয়ারের দাম অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যাবে না। লটারির ব্যবস্থা উঠিয়ে দেওয়া একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে সবাই শেয়ার পেয়ে যাবে, ফলে শেয়ারের সরবরাহ বেড়ে যাবে। আগের মত কম মানুষের হাতে শেয়ার থাকবে না। এ নিয়মের ফলে দেশের পুঁজিবাজারে ‘একটি নতুন শ্রেণির’ বিনিয়োগকারী তৈরি হবে, যারা আইপিওর শেয়ারে দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ করতেন চান। আগে শেয়ারের জন্য আবেদন করার পর আবার লটারি করা লাগত। এখন লাটারি ছাড়াই শেয়ার যার যার অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। এখন চাইলে অনেক আগেই শেয়ারের লেনদেন শুরু হয়ে যেতে পারে।
কমিশন বলছে, বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে উত্সাহী করবে নতুন এ পদ্ধতি।
অনেক বিনিয়োগকারী নতুন আইপিওর অপেক্ষায় থাকেন। আইপিও ছাড়া হলে তারা নাম-বেনামে নানা বিও অ্যাকাউন্ট থেকে আবেদন করেন। লটারিতে শেয়ার পেলে দাম বাড়ার পর বিক্রি করে দিয়ে বাজার থেকে বেরিয়ে যান। তাদের বলা হয় ‘আইপিও হান্টার’। অনেক সময় তাদের কারণে একটি অ্যাকাউন্টধারী সাধারণ বিনিয়োগকারীরা আইপিওর লটারিতে শেয়ার পান না।
লটারি পদ্ধতি উঠে যাওয়ায় এ আইপিও হান্টারদের দৌরাত্ম আর থাকবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ♦