অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও যুক্তরাজ্য-সুইডেনভিত্তিক ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা ‘এজেডডি১২২২’-এর অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাজ্য।
এর মধ্য দিয়ে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে দ্বিতীয় টিকা পেল যুক্তরাজ্য। আর প্রথম দেশ হিসেবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দিল যুক্তরাজ্য। এর আগে চলতি মাসে ফাইজার-বায়োঅ্যানটেকের টিকা অনুমোদন দিয়েছে দেশটি যা, ইতিমধ্যে ছয় লাখ মানুষকে দেয়া হয়েছে।
আজ বুধবার ৩০ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ স্বাস্থ্য দপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে। বলেছে, ‘কোভিড-১৯ এর টিকা হিসেবে ব্যবহারের জন্য ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা পণ্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সুপারিশে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও আস্ট্রাজেনেকার টিকা বেছে নিয়েছে সরকার।’
যুক্তরাজ্যের নীতিনির্ধারকদের মতে, টিকাটি নিরাপদ ও কার্যকর। এরই মধ্যে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা থেকে টিকাটির ১০ কোটি ডোজের ক্রয়াদেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
অনুমোদনের ফলে টিকাদানের গতি বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করছেন, টিকাকরণ কর্মসূচি ব্যাপক সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হল। এর মূল লক্ষ, মানুষের জীবনকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
টিকাটি স্বল্পমূল্যের। সহজে উৎপাদন করা যায়। সাধারণ রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা যায়।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে, আগামী এক বছরে পুরো বিশ্বের জন্য তিন বিলিয়ন ডোজ টিকা তৈরি করবে তারা।
ভারতে এ টিকা উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া। তারা এ টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন চেয়ে ইতোমধ্যে সরকারের কাছে আবেদন করেছে। ভারত সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা উৎপাদন শুরু করলে বাংলাদেশও এ টিকা পাবে। টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে ইতোমধ্যে সেরাম ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। ভবিষ্যতে বাংলাদেশও টিকাটি তৈরির চেষ্টা করবে বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে টিকার প্রথম চালান দেশে পৌঁছে যাবে বলে আশাবাদী স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
অক্সফোর্ডের টিকার দুই ডোজ নিতে হবে চার সপ্তাহের ব্যবধানে। প্রতি ডোজের দাম পড়বে তিন পাউন্ডের মত (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৩৯ টাকা)।
‘এজেডডি১২২২’
‘এজেডডি১২২২’ চলতি বছরের শুরুতে তৈরি করা হয়। এপ্রিলে প্রথমবারের মত কোন স্বেচ্ছাসেবীর ওপর প্রয়োগ করা হয়। পরে হাজারো মানুষের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলে।
টিকাটি ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে।
শিম্পাঞ্জিদের সংক্রমিত করতে পারে এমন একটি সাধারণ ঠাণ্ডা-জ্বরের ভাইরাসের মধ্যে জিনগত পরির্তন এনে টিকাটি তৈরি করা হয়েছে। এটিকে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে যাতে মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে না পারে। এর মধ্যে রয়েছে করোনাভাইরাসের মূল নকশার একটি অংশ। এটি ‘স্পাইক প্রোটিন’ নামে পরিচিত।
মূল নকশাটিকে দেহে প্রবেশ করানোর ফলে তা স্পাইক প্রোটিন তৈরি শুরু করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তখন একে একটি হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে ও ধ্বংসের চেষ্টা করে। পরবর্তী সময়ে টিকা নেয়া ব্যক্তি যদি মূল ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তখন তার দেহ আগে থেকে জানবে যে কীভাবে ভাইরাসটিকে প্রতিরোধ করা যায়।
টিকাটি খুবই নিরাপদ বলেও দাবি করেছেন গবেষকরা। তারা বলেছেন, এটি করোনার সংক্রমণ ছড়ানো কমিয়ে আনে। এ ছাড়া করোনায় মৃত্যু কমিয়ে আনতেও সহায়ক।
করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকা স্বাস্থ্যকর্মী ও বয়স্ক ব্যক্তিরা আগে টিকা পাবেন। ♦